আদিবাসীদের মধ্য থেকে কুসংস্কারের অন্ধকার দূর করা একটা দীর্ঘ প্রক্রিয়ার ব্যাপার, এ বিষয়ে আগেই আলোচনা করেছি। তবু একটি হত্যা রোধ করতে তাৎক্ষণিক আর কোনও উপায় আমার জানা ছিল না।
যেভাবে আগুন জ্বালিয়েছিলাম, তার মধ্যে যে কোনও অতিপ্রাকৃতিক ব্যাপার ছিল না, এটা নিশ্চয়ই নতুন করে বলার অপেক্ষা রাখে না। বিজ্ঞান পরিষদের ছেলেদের সাহায্যে দুটি জিনিস সংগ্রহ করেছিলাম—পটাশিয়াম পারম্যাঙ্গানেট ও গ্লিসারিন। সবার দৃষ্টির আড়ালে আখের ছোবড়ায় ফেলে দিয়েছিলাম পটাশিয়াম পারম্যাঙ্গানেট। গ্রাম ঘোরার সময় বাটির পুরো জলটাই ছিটিয়ে বা ফেলে শেষ করে দিয়েছিলাম। হাতের কৌশলে, সবার নজর এড়িয়ে বাটিয়ে ঢেলে দিয়েছিলাম গ্লিসারিন।
প্রথম দফায় গ্লিসারিন ঢেলেছিলাম ছিবড়ের সেই জায়গাগুলোতে, যেখানে পটাশিয়াম পারম্যাঙ্গানেট নেই। দ্বিতীয় দফায় গ্লিসারিন ঢেলেছিলাম পটাশিয়াম পারম্যাঙ্গানেটের গুঁড়োর উপর। পটাশিয়াম পারম্যাঙ্গানেট গ্লিসারিনের সংস্পর্শে এসে তাকে অক্সিডাইজ করেছে। অক্সিজেনের ফিজিক্যাল পরিবর্তনের ফলে ওই রাসায়নিক উত্তাপ বেড়ে গিয়ে এক সময় আগুন জ্বলে উঠেছে।
যেখানে গ্রামবাসীরা ঘোষিত ডাইনিকে গ্রাম ছাড়া করেছে অথবা ‘এখুনি’ হত্যা করবেন না মনে হচ্ছে, সেখানে গ্রামবাসীদের অন্যভাবে সত্যকে বোঝানো যেতে পারে। উদাহরণ হিসেবে একটা ঘটনা তুলে দিচ্ছি। এবারের ঘটনাস্থল মুর্শিদাবাদ জেলার সাগরদিঘি ব্লকের চাঁদপাড়ার সাঁওতাল পল্লি। সালটা ১৯৫৮। ঈশ্বর সোরেন বছর কুড়ির এক তরুণ, কিছু দিন ধরে কাশতে কাশতে রক্ত বের করে ফেলছিল মুখ থেকে। শরীরও শীর্ণ হয়ে যাচ্ছিল। এমনটা কেন হচ্ছে? ঈশ্বরের বাবা ছোট সোরেন জানগুরুর জড়িবুটি খাওয়াচ্ছিল কিন্তু তাতে কোনো কাজ হচ্ছিল না। জানগুরু শেষে জানাল ঈশ্বরকে ডান খাচ্ছে। ডান কে তাও জানাল। ঈশ্বরের বিমাতা চুরকীই ঈশ্বরকে খাচ্ছে।
চুরকীকে ডইনি ঘোষণা করায় প্রাণ বাঁচাতে চুরকী বাপের বাড়ি পালিয়ে যায়। বাপের বাড়ি কাছেই পশুই গ্রামে। মণিগ্রাম বয়স্ক শিক্ষা কেন্দ্রে ঈশ্বর লেখাপড়া শিখতে আসতেন। শিক্ষক কমলারঞ্জন প্রামাণিকের সন্দেহ হল ঈশ্বরের টি বি রোগ হয়েছে। কমলারঞ্জন গ্রামের মানুষদের বোঝালেন ঈশ্বরের এক ধরনের অসুখ হয়েছে। এই অসুখে