বিষয়বস্তুতে চলুন

পাতা:অলৌকিক নয়, লৌকিক (দ্বিতীয় খণ্ড) - প্রবীর ঘোষ.pdf/৩২২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৩১৮
অলৌকিক নয় লৌকিক ২

কুলো চালান

 শুধু আদিবাসী সমাজেই নয়, গ্রামে-গঞ্জে, আধা শহরে এমনকি খোদ কলকাতাতেও ‘কুলো-চালান’ দিব্বি ‘চলছে-চলবে’ করে ঠিকই টিকে রয়েছে কুলো-চালানে বিশ্বাসী মানুষের সংখ্যাও কম নয়। আসলে একরার কুলো-চালানে নিজে অংশ নিলে অবিশ্বাস করা বেজায় কঠিন। কেন কঠিন, সে আলোচনায় যাওয়ার আগে কুলো-চালানে কী হয়, তাই নিয়ে একটু আলোচনা করে নিলে বোধহয় মন্দ, হবে না।

 যে সমস্ত প্রশ্নের উত্তর ‘হ্যাঁ’ বা ‘না’-তে দেওয়া সম্ভব তার সবই নাকি স্কুলো-চালানে জেনে নেওয়া সম্ভব। যেমন ধরুন—‘আমি পরীক্ষায় পাশ করব কি না?’ ‘আমার প্রমোশনটা এবারে হবে কি না?’ ‘এ বছরের মধ্যে আমার চাকরি হবে কি না?’ ‘সুদেষ্ণার সঙ্গে আমার বিয়ে হবে কি না?’ ‘এ বছর মেয়ের বিয়ে দিতে পারবে কি না?’ ‘আমার ঘড়িটা গঙ্গাধর চুরি করেছে কি না?’ ‘চাঁদু হাঁসদা আমরা গরুটাকে বান মেরেছে কি না?’ এমনি হাজারো প্রশ্নের উত্তর মিলতে পারে। তবে প্রশ্ন পিছু নগদ দক্ষিণা চাই। দক্ষিণা নেবেন ওঝা, গুনিন বা তান্ত্রিক, যিনি মন্ত্র পড়ে কুলোকে চালাবেন। কুলো ঘুরবে, বিনা হাওয়াতেই ঘুরবে।

 কুলো চালানে’র কুলোর একটু বৈশিষ্ট্য আছে। না, একটু ভুল বললাম। কুলোতে বৈশিষ্ট্য নেই। তবে এই কুলোয় উঁচু কানায় গেঁথে দেওয়া হয় ধারালো ছুঁচলো লম্বা কাঁচি। যে কাঁচি দিয়ে নাপিতেরা চুল ছাঁটে, সেই ধরনের কাঁচিই কুলো-চালানে ব্যবহৃত হয়। কাঁচির হাতল বা আঙুল ঢোকাবার দিকটা থাকে কুলোর ওপরে। তলার ছবিটা দেখলে একটা আন্দাজ পাবেন। কুলো তো তৈরি হলো। ওঝা মন্ত্রও পড়ল। কিন্তু তারপর? তারপর নয়, মন্ত্র পড়ার সময়ই প্রশ্নকর্তা কাঁচির একদিকের হ্যাণ্ডেলের তলায় একটা আঙুল রাখেন। সাধারণত তর্জনী স্থাপন করতে বলা হয়। অন্য হ্যাণ্ডেলের তলায় তর্জনী রাখেন প্রশ্নকর্তার পরিচিত কেউ অথবা গুনিন স্বয়ং। আবার একটা ছবি দিলে কেমন হয়?

 গুণীন এবার প্রশ্নকর্তাকে বলেন, আপনি মনে মনে আপনার প্রশ্নটা ভাবতে থাকুন। গভীরভাবে ভাবতে থাকুন। আপনার প্রশ্নের উত্তর যদি ‘হ্যাঁ’ হয়, দেখবেন কুলোটা আপনা থেকে ঘুরে যাবে আর, উত্তর যদি ‘না’ হয়, কুলোটা ঘুরবে না। একই রকমভাবে দাঁড়িয়ে থাকবে।