বিষয়বস্তুতে চলুন

পাতা:অলৌকিক নয়, লৌকিক (দ্বিতীয় খণ্ড) - প্রবীর ঘোষ.pdf/৩২৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৩২০
অলৌকিক নয় লৌকিক ২
৩২০

প্রয়োজনই নেই। কুলো চালাবে প্রশ্নকর্তার অবচেতন মন।

 অবচেতন মন দিয়ে আংটি চালানোর বিষয়ে ভূতে ভর নিয়ে আলোচনায় যেহেতু যথেষ্ট সময় নিয়েছি, তাই আর আপনাদের মূল্যবান সময় নষ্ট করলাম না। শুধু এটুকু বলি—আপনি নিজে কুলো-চালানের কুলো নিয়ে বসুন। সঙ্গী করুন কাউকে। তাকে বলুন, কোনও প্রশ্ন গভীরভাবে চিন্তা করতে। তবে প্রশ্নটা যেন এমন হয় যাতে তার উত্তর ‘হ্যাঁ’ বা ‘না’-তেই পাওয়া যায়। একমনে চিন্তা করতে শুরু করলেই প্রশ্নের উত্তর ‘হ্যাঁ’ হলে কুলো ঘুরবে, ‘না’ হলে কুলো স্থির থাকবে।

 একটু অপেক্ষা করলেই দেখতে পারেন মজা। দেখবেন, আপনার সঙ্গীর বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তরে কুলো কখনও ঘুরছে, কখনও বা স্থির থাকছে।

 এমন পরীক্ষার মধ্যে দিয়েই বুঝতে পারবেন জানগুরু বা তান্ত্রিকদের কুলো-পড়া মন্ত্রের বুজরুকি।

থালা পড়া

 থালা-পড়া দিয়ে সাপে কাটা, কুকুরে কামড়ানো রোগীকে ভালো করার মতো ওঝা ও গুনিন এখন এদেশে অনেক আছে—এ ধরনের বিশ্বাস অনেক মানুষের মধ্যেই বর্তমান। আবারও বলি, শুধুমাত্র আদিবাসীদের মধ্যেই এই বিশ্বাস সংক্রামিত হয়নি, ছড়িয়ে পড়েছে বহু শহরবাসী বা শহরে চাকুরিয়াদের মধ্যেও।

 রোগী রোদ্দুরে পিঠ খুলে বসে থাকে। গুনিন পিতল বা কাঁসার থালায় মন্ত্র পড়ে পিঠে থাবড়ে বসিয়ে দিতেই অবাক কাণ্ড! থালাটা রোগীর পিঠের উপর সেঁটে বসে যায়। যেন চুম্বকের টানে আটকে আছে লোহা। গুনিন যতক্ষণ মন্ত্র পড়ে অর্থাৎ যতক্ষণ সাপের বা কুকুরের বিষ শরীর থেকে না নামে, ততক্ষণ থালা আটকে থাকে পিঠে। বিষ নামলেই পিঠের থালাও সুড়সুড় করে নেমে আসে।

 বহু প্রত্যক্ষদর্শী আমাকে জানিয়েছেন, প্রতিটি ক্ষেত্রেই নাকি রোগী থালা-পড়াতে বিষ-মুক্ত হয়েছেন। কিন্তু মূল প্রশ্নটা এই, কী করে প্রত্যক্ষদর্শী সিদ্ধান্তে এলেন রোগী বিষ-যুক্ত ছিলেন? কুকুর কামড়ালেই জলাতঙ্ক হয় না। জলাতঙ্ক হয় এক ধরনের ভাইরাসের আক্রমণ থেকে। যে কুকুরটি কামড়েছে সে যদি আগে থেকেই জলাতঙ্ক রোগের ভাইরাসে আক্রান্ত থাকে শুধুমাত্র তবেই তার কামড়ে সৃষ্ট ক্ষত ভাইরাসে আক্রান্ত হতে পারে।

 কুকুর জলাতঙ্ক রোগে আক্রান্ত হলে সাধারণ ছয় দিনের বেশি বাঁচে না।