বিষয়বস্তুতে চলুন

পাতা:অলৌকিক নয়, লৌকিক (দ্বিতীয় খণ্ড) - প্রবীর ঘোষ.pdf/৩৪২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৩৩৮
অলৌকিক নয় লৌকিক ২
৩৩৮

ধীরে সুস্থ হয়ে উঠছেন।

 সমগ্র বিষয়টার মধ্যে একটা অলৌকিকের ছোঁয়া ছড়িয়ে আছে। কোনও মালা কি এমনি করে বাড়ে? বাড়ে বইকি, মালাটা যদি বিশেষভাবে তৈরি হয় ফুলের বদলে বামনহাটি, ভৃঙ্গরাজ অথবা আপাং গাছের ডাল দিয়ে। এইসব গায়ের ডাল ফাঁপা এবং দ্রুত শুকিয়ে কৃশ থেকে কৃশতর হতে থাকে।

 এই জাতীয় গাছের ডাল ছোট ছোট করে কেটে তৈরি করা হয় মালা। ডালের টুকরোগুলোকে গেঁথে মালা তৈরি করলে সে মালা কিন্তু বাড়বে না। মালা বাড়াতে গেলে সুতো বাড়াতে হবে। ছুঁচে গাঁথা মালায় বাড়তি সুতো পাওয়া সম্ভব নয় বলেই সে মালা বাড়ে না। জণ্ডিসের মালা তৈরি হয় বিনা ছুঁচে। বলা চলে জণ্ডিসের মালা বোনা হয়। এই বোনার কৌশলেই বাড়তি সুতো মালা বাড়ায়। এবার আসা যাক মালা বানাবার পদ্ধতিতে। বামনহাটি, ভৃঙ্গরাজ বা আপাং অথবা ফাঁপা অথচ দ্রুত শুকোয় এমন কোনও গাছের ডাল কেটে বানানো হয় ছোট ছোট কাঠি, এক একটা কাঠি আড়াআড়িভাবে ধরে আঙুলের সাহায্যে ফাঁস দিয়ে গা ঘেঁষে ঘেঁষে বাঁধা হতে থাকে কাঠিগুলো। এই বিশেষ পদ্ধতির ফাঁস বা গিঁটের নাম শিফার্স নট (shiffer's knot) বা সেলার্স নট (sailor's knot)।

 গা ঘেঁষে ঘেঁষে জড়ানো কাঠিগুলো সময়ের সঙ্গে সঙ্গে যতই শুকোতে থাকে ততই সুতোর ফাঁক ঢিলে হয়, দু-কাঠির মধ্যে ফাঁক বাড়ে। মালা বাড়তে থাকে।

 এই মালা বাড়ার পিছনে যেমন মন্ত্রশক্তি কাজ করে না, তেমনই জণ্ডিস রোগ শুষে নেওয়াও এই বাড়ার কারণ নয়। এই একই পদ্ধতিতে মন্ত্র ছাড়া আপনি নিজে হাতে মালা বানিয়ে একটা পেরেকে ঝুলিয়ে পরীক্ষা করে দেখুন। মন্ত্র নেই, জণ্ডিস নেই তবু মালা বাড়ছে।

 জণ্ডিস হয় বিলিরুবিন নামে হলুদ রঙের একটি রঞ্জক পদার্থের জন্য স্বাভাবিকভাবে মানুষ ও অন্যান্য মাংসাশী প্রাণীর পিত্তে বিলিরুবিনের অবস্থান। রক্তে এর স্বাভাবিক উপস্থিতি প্রতি ১০০ সি.সি.-তে ০.১ থেকে ১ মিলিগ্রাম। উপস্থিতির পরিমাণ বাড়লে প্রথমে প্রস্রাব হলুদ হয়। তারপর চোখের সাদা অংশ ও শরীর হলুদ হতে থাকে। রক্তে বিলিরুবিনের পরিমাণ বিভিন্ন কারণে বাড়তে পারে। প্রধানত হয় ভাইরাসজনিত কারণে। স্বাভাবিক রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা থাকলে, বিশ্রাম নিলে, চর্বি জাতীয় খাবার গ্রহণ না করলে রোগী কিছুদিনের মধ্যেই আরোগ্যলাভ করেন।