বিষয়বস্তুতে চলুন

পাতা:অলৌকিক নয়, লৌকিক (দ্বিতীয় খণ্ড) - প্রবীর ঘোষ.pdf/৩৫০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৩৪৬
অলৌকিক নয় লৌকিক ২

দূর-দূরান্ত থেকে মানুষের স্রোত এসে ভেঙে পড়তে লাগল সরস্বতীর বাড়িতে। বাক-সিদ্ধা সরস্বতী যাকে যা বলতেন তাই হতো। যে রোগীদের উপর সদয় হতেন, বলতেন, “যা ভালো হয়ে যাবি। একটু হিমসাগরের জল আর ডালিমতলার মাটি মুখে দে গে যা।” রোগীরা ভালোও হয়ে যেত। একটিই শুধু নিষেধ ছিল – শুক্রবার মাছ, মাংস, ডিম, রসুন, পেঁয়াজ, মুসুরডাল আর পুঁই খাওয়া চলবে না, চলবে না কোনও নিমন্ত্রণ খাওয়া।

 শুক্রবারটা সরস্বতী ও রামশরণের কাছে ছিল পুণ্য-বার। ওই দিনেই আউলচাঁদ ফকির ডালিমতলায় এসেছিলেন।

 দ্রুত বাক-সিদ্ধা সরস্বতী ভক্তদের কাছে হয়ে উঠলেন সতীমা। রামশরণ ও সতীমা বিশ্বাস করতেন, গৌরাঙ্গই আউলচাঁদ ফকির বেশে এসেছিলেন। আউলচাঁদ দীক্ষা দিয়েছিলেন বাইশ জনকে। গৌরাঙ্গ মহাপ্রভুও বাইশ জনকে দীক্ষা দিয়েছিলেন। দু-জনের মধ্যে ছিল এমনি নাকি আরও অনেক মিল।

 সতী-মার মৃত্যুর পর দোল পূর্ণিমায় মেলা হচ্ছে তাও বহু বছর হলো। এই সতীমার মেলায় নাকি রামকৃষ্ণদেব, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, কেরি সাহেব, নবীনচন্দ্র সেন, ঈশ্বরচন্দ্র গুপ্ত, অনেকেই গিয়েছিলেন। নবীন সেনের আত্মজীবনীতেও মেলার গণ-ভরের বিবরণ মেলে—

 ‘আমি দেখিয়াছি যে, শতশত নরনারী ‘সতীমাঈ’-র সমাধি সমীপস্থ ‘দাড়িম্বতলায় বৈষ্ণবদের মত দশাপ্রাপ্তা হইয়া অচৈতন্য অবস্থার দিনরাত্রি ধরণা দিয়া পড়িয়া থাকে, কেহ বা অপদেবতাশ্রিত লোকের মত মাথা ঘুরাইতেছে ও কেহ উন্মাদের মত নৃত্য করিতেছে।’

 এখনও একই জিনিস চলছে। অনেক ভক্তরাই হিমসাগরে স্নান করে ভিজে কাপড়ে দণ্ডী খেটে ডালিম তলা ঘুরে আবার হিমসাগরে যায়। ডালিমতলার মাটি আর হিমসাগরের জল এখনও বহু বিশ্বাসীই পরম ভক্তির সঙ্গে গ্রহণ করেন। অনেকে মানত করে ডালিমতলায় বর্তমানে যে ডালিম গাছ আছে তাতে ঢিল বেঁধে যায়। মনস্কামনা পূর্ণ হলে অনেকেই ডালিমতলায় সতীমাকে শাড়ি চড়ায়। মেলায় তিন দিনে শ-পাঁচেক শাড়ি তো চড়েই। ‘গদি’-তে আসীন ‘বাবুমশায়’-কে ভক্তরা প্রণামী দিয়ে প্রণাম করে তাঁদের সমস্যার কথা জানান। ভক্তেরা বিশ্বাস করেন, গদি’-তে বসার অধিকারী বাবুমশায় সতীমার কৃপায় সে-সময় বাক-সিদ্ধ হন। বাবুমশায় অনেককেই বলেন, “যা তোর সেরে যাবে”, কারও হাতে তুলে দেন ফুল, কাউকে আদেশ দেন ডালিমতলার মাটি নিয়ে যেতে, যাকে যেমন ইচ্ছে হয় তেমনই আদেশ করেন। প্রণামী পড়ে