যুক্তিবাদী আন্দোলনকর্মী বা বিজ্ঞান আন্দোলনকর্মীদের নয়। এগিয়ে আসতে হবে সাংস্কৃতিক ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোকে। যুক্তিবাদী ও বিজ্ঞান আন্দোলনকর্মীদের দৃঢ় প্রত্যয়ে বুঝে নিতে হবে সত্যিই তাঁরা বিজ্ঞান আন্দোলন প্রসারে কী ভূমিকা পালন করে চলেছেন। সাধারণ মানুষদের মধ্যে, অক্ষরজ্ঞানের সুযোগলাভে বঞ্চিত মানুষদের মধ্যে বিজ্ঞান-মনস্কতা গড়ে তুলতে কী পথনির্দেশ দিতে পেরেছেন? শিক্ষক-অধ্যাপক, যাঁদের হাতে রয়েছে শিক্ষিত করে তোলার ভার, তাঁদের ওপর স্বভাবতই আমাদের কিছুটা বাড়তি প্রত্যাশা থাকা স্বাভাবিক যে, তাঁর ছাত্রদের অন্ধ-বিশ্বাস, ভ্রান্ত বিশ্বাসকে দূর করার কাজে অগ্রণী ভূমিকা নেবেন। শিক্ষা দেওয়ার অর্থ শুধু বইয়ের পড়া বোঝানো নয়, কুসংস্কার দূর করাও শিক্ষা প্রসারেরই অঙ্গ। আমরা যারা আজ শিক্ষায় ও কর্মজীবনে কিছুটা অন্তত প্রতিষ্ঠিত, তাদের এ কথা মনে রাখা একান্তই প্রয়োজনীয় যে, আমাদের দেশের সংখ্যাগুরু শোষিত শিক্ষার সুযোগ লাভে বঞ্চিত মানুষদের করের টাকায় গড়ে ওঠা শিক্ষা ব্যবস্থার সুযোগ নিয়েই আমরা নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করেছি। সেই ঋণের কিছুটাও কি আমরা শোষিত মানুষদের শোধ দেওয়ার চেষ্টা করব না? সামান্যতম কৃতজ্ঞতাবোধের পরিচয় দেওয়ার চেষ্টাও কি আমরা করব না?
আমাদের দেশে কিছু নামী-দামি বিজ্ঞান সংস্থা রয়েছে—ছোট ছোট অসংখ্য বিজ্ঞান সংস্থা, যুক্তিবাদী সংস্থা ও অসংখ্য মানুষ ওইসব জ্যেষ্ঠ সংস্থাগুলোর দিকে সঠিক পথনির্দেশের অপেক্ষায় রয়েছে। জ্যেষ্ঠদের পথনির্দেশ যদি ভুল পথে বা বিশেষ উদ্দেশ্যমূলক হয় তবে কনিষ্ঠদের এবং সাধারণ মানুষদের বিভ্রান্তির পথে পা বাড়ানোর সম্ভাবনাও থেকে যায়। জ্যেষ্ঠ সংস্থাগুলোর সদস্যদের উচিত সংস্থার নেতৃত্ব এমন হাতে ন্যস্ত করা, যাঁরা কথায় ও কাজে বিপরীত মেরুতে বিচরণ করেন না।
'৮৭-তে ভারতবর্ষের নানা প্রান্ত থেকে ছাব্বিশটি বিজ্ঞান সংগঠন একসঙ্গে মাসাধিককালব্যাপী সারা ভারত জন-বিজ্ঞান জাঠার আয়োজন করেছিল। দেশের পাঁচটি ভিন্ন প্রান্ত থেকে পাঁচটি আঞ্চলিক জাঠা মোট প্রায় পঁচিশ হাজার কিলোমিটার পথ অতিক্রম করেছিল। বিজ্ঞানকে সাধারণ মানুষের কাছে জনপ্রিয় করতে, বিজ্ঞান আন্দোলন গড়ে তুলতে যে সব বিষয় জাঠা বেছে নিয়েছিল সেগুলো হলো: স্বনির্ভরতা, বৈজ্ঞানিক অনুসন্ধান, জন-বিজ্ঞান আন্দোলন, প্রাথমিক বিজ্ঞান, বিজ্ঞানের নানাক্ষেত্র, বিজ্ঞান ও ভারতবর্ষ,অলৌকিক নয় লৌকিক / ২য়—৩