বিষয়বস্তুতে চলুন

পাতা:অলৌকিক নয়, লৌকিক (দ্বিতীয় খণ্ড) - প্রবীর ঘোষ.pdf/৪১০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৪০৬
অলৌকিক নয় লৌকিক ২
৪০৬

শিক্ষকের প্রভাবে, পরিবারের গুরুজনদের প্রভাবে অথবা কলেজের নিকটতম বন্ধুদের অথবা কোনও রাজনৈতিক সচেতন কারো প্রভাবে কোনও রাজনৈতিক দলকে সমর্থন করতে শুরু করে, অথবা কেউ ব্যক্তিস্বার্থে জড়িয়ে পড়ে কলেজ-রাজনীতিতে। এমন দেখাই যায় বাবা-মায়ের রাজনৈতিক ও সমাজতাত্ত্বিক মতাদর্শকে অগ্রহণীয়, ভ্রান্ত মনে করে সন্তান বিপরীত কোনও মতাদর্শকে গ্রহণ করেছে।

 আমাদের এবং অন্যান্য বহু সমাজেই শিশু, কিশোর-কিশোরী ও যুবক-যুবতীদের কী পড়াশোনায়, কী জীবনে প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে তীব্র প্রতিযোগিতার মুখোমুখি হতে হচ্ছে। সন্তানের মা-বাবারাও ভীষণ ভাবেই চাইতে শুরু করেছে, এই তীব্র প্রতিযোগিতার যুগে আমার সন্তানকে টিকে থাকতে হলে ভাল হতে হবে, দারুণ কিছু ফল করতে হবে। সন্তান স্কুলে প্রথম দু-চারজনের মধ্যে না থাকলে মা-বাবারা শঙ্কিত হন। সন্তানের ওপর প্রচণ্ড চাপ দিতে থাকেন তাঁরা। এর ফল অনেক সময়ই প্রীতিপদ হয় না। অনেক মনোরোগ চিকিৎসকই এর জন্য সাধারণত অভিভাবকদের সরাসরি অভিযুক্ত করেন, অথবা পত্র-পত্রিকা ও বেতার মারফত মা-বাবাদের দোষারোপ করেন। কিন্তু তাঁরা সাধারণত কেউই বলেন না এই সামাজিক পরিবেশের জন্য আমাদের সমাজের চূড়ান্ত অনিশ্চয়তাই দায়ী। অর্থাৎ এ সবই আর্থ-সামাজিক অবস্থারই ফল।

 মানুষ যে ছোট গোষ্ঠীর মধ্যে বেড়ে ওঠে, যে গোষ্ঠীর সঙ্গে একাত্ম, সেই গোষ্ঠীর চোখ দিয়েই দেখে, কান দিয়ে শোনে। এ কথা যেমন সত্যি, তেমনই সত্যি, অন্য গোষ্ঠীর অনেক কিছুর সঙ্গে পরিচিত হয়ে তাদের সঙ্গেও একাত্মতা অনুভব করে, তাদের আচার-ব্যবহার, ভালো লাগার সঙ্গে জড়িয়ে পড়ে। যে পূর্ববঙ্গীয় বালক উদ্বাস্তু হয়ে এপার বাংলায় এসে ‘জবরদখল’ কলোনির বাসিন্দা, তার ক্লাসের প্রিয় বন্ধুটিই হয়তো কলকাতার কোনও বনেদি পরিবারের ছেলে। বইয়ের অভাব মেটাতে, একসঙ্গে পড়াশোনা, করতে, কলের গান শুনতে, রেডিও শুনতে ‘বাঙাল’ ছেলেটি অনেকটা সময়ই কাটায় বনেদি ‘ঘটি’র বাড়িতে। বনেদি বাড়ির অনেক কিছুই একটু একটু করে ভালো লাগতে থাকে। ভালো লাগে বনেদি সংস্কৃতি, আচার-ব্যবহার, মহিলাদের অন্দরমহলের আড়ালকে মনে হয় আভিজাত্যের লক্ষণ। ‘বাঙাল’দের প্রাণখোলা উচ্চস্বরে খুঁজে পায় রুচির অভাব। ইস্টবেঙ্গলের চেয়ে মোহনবাগানের জয় রক্তে বেশি তুফান তোলে।