বিজ্ঞান অনেক কিছু করেছে ও আরও কিছু করতে পারে, এ নিয়ে কেউ কোমর বেঁধে তর্কে নামবেন না জানি; কিন্তু বিজ্ঞানকে মানুষের ভবিষ্যৎ গড়ে তোলার স্বাধীনতা কোনো দেশের রাষ্ট্রীয় সম্মানে ভূষিত শাসকশ্রেণি, পূজিত নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিরা—(বিজ্ঞানীরা ও নামি-দামী বিজ্ঞানীরাও এর মধ্যে আছেন) দেবেন না। সেই পুরনো কথাই তুলবেন। বিজ্ঞান বস্তুবাদী দৃষ্টিকোণ থেকে মানুষ ও সমাজকে দেখতে চায় ও তাদের সম্পর্ক নিরূপণ করতে চায় এবং সৎ বিজ্ঞানীরা বিজ্ঞানসম্মত শোষণহীন সমাজ সংগঠিত করতে চায়। অধিকাংশ দেশের শাসকশ্রেণি তাদের স্বার্থরক্ষক সমাজ সংগঠনের পরিবর্তন চায় না। কাজেই আমরা সব পণ্ডিতদের মুখ ও কলম থেকেই এই একই প্রচার শুনছি গত তিন চার দশক ধরে। বিজ্ঞান মানুষের জৈবিক সমস্যা হয়তো নিরসন করতে পারে, কিন্তু আত্মিক ঐশ্বর্য থেকে বঞ্চিত করে মানুষকে অমানুষ করে তুলছে। যে বিজ্ঞানের মধ্যে নীতিবোধ, সৌন্দর্যবোধ ও দর্শনচিন্তা নেই—সেই বিজ্ঞান চাঁদে পাড়ি দিতে পারলেও মূল্যবোধ বাড়াতে পারে না, মনুষ্যত্ব উন্মেষে অক্ষম। ভারতের দেশে উন্নয়ন পরিকল্পনায় বিজ্ঞান-বিশারদরা বিজ্ঞানের প্রযুক্তিবিদ্যা ও প্রাচীন ব্রহ্মবিদ্যার কুশলী মিশ্রণের ফর্মুলা আবিষ্কারের জন্য আলোচনা ও চর্চায় রত। এদেশের শাসক মনে করে শুধু ভাত রুটির জোগান দিলে মানুষ গড়া যাবে না! মনুষ্যত্বের উন্মেষে প্রয়োজন বিজ্ঞানের সঙ্গে ধর্মের নির্যাসের সঠিক পরিমাণে সংযোজন।
বিজ্ঞান বিরোধিতায় তাই স্থূল চেষ্টা এখন আর আগের মতো নজরে পড়ে না। অলৌকিকতার ও রহস্যময়তার ধাঁধার সৃষ্টি করে কিছু বিজ্ঞানী সাধুসন্তদের বিজ্ঞান বিরোধিতায় মদত জোগাচ্ছেন। আজ যোগবলে অলৌকিক শক্তির অধিকারী হয়েছেন কোনও স্বামীজি বা বাবাজি—এই প্রচার বা এই ধরনের প্রদর্শনী আগের মতো বিস্ময় উৎপাদন করে না। আজকের রকেট—কম্পিউটার যুগের মানুষ আর আগের মতো প্রয়াত আত্মার বাক্যালাপ শুনে শিহরিত হয় না। আজ বিজ্ঞানের মর্যাদা পাবার জন্য উৎসুক পরাসনোবিদ্যা, জ্যোতিষ ইত্যাদি বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠ্যসূচির মধ্যে আসতে চায়। ভারতীয় যোগী থেকে ইউরি গেলারেরা মাঝে মাঝে মিডিয়া মারফত নিজেদের জাহির করার চেষ্টা করলেও অলৌকিককে বিজ্ঞানীদের রবার স্ট্যাম্পে লৌকিক করে তুলতে পারেননি। যদি কোনোদিন ল্যাবরেটরিতে পদার্থকণার বিশেষ কোনও শক্তি আবিষ্কৃত হয় যা টেলিপ্যাথি বা ক্লেয়ারোভয়েনসের রহস্যভেদে সক্ষম, তাহলেও ESP-র মর্যাদা বৃদ্ধি হবে না। আধুনিক বিজ্ঞানের মতে বস্তুকণা ও শক্তির অভিব্যক্তি অজস্রভাবে ঘটতে পারে—সপক্ষে আর একটি তথ্য সংযোজিত হবে। সঙ্গে সঙ্গে এও প্রমাণিত হবে যে, এই বস্তুকণা তথাকথিত অলৌকিক শক্তি বিজ্ঞানীর পঞ্চেন্দ্রিয়ের কোন একটির কাছেই অভিব্যক্ত হয়েছে প্রকৃতিবিজ্ঞানের মেথডোলজির মাধ্যমেই।
ঐশীশক্তি, অলৌকিক শক্তি, অতিপ্রাকৃত শক্তি—প্রভৃতি কথাগুলো পরিহার