বিষয়বস্তুতে চলুন

পাতা:অলৌকিক নয় লৌকিক (প্রথম খণ্ড) - প্রবীর ঘোষ.pdf/১২৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।
১২৮
অলৌকিক নয়, লৌকিক (প্রথম খণ্ড)

মানুষের চোখে ঘটনাটা রহস্যময় ও অলৌকিক বলে মনে হয়। কর্পূর একটি volatole বা উদ্বায়ী বস্তু। অতিমাত্রায় জুলনশীল। ফলে অতি দ্রুত জ্বলে শেষ হয়ে যায়। আগুনের তাপ জিভে ততটা অনুভূত হয় না। জিভ ভাল করে লালা দিয়ে ভিজিয়ে নিলে কয়েক মুহূর্তের জন্য জ্বলন্ত কপূরের তাপ আদৌ অসহ্য নয়। এই খেলা দেখাতে যে বিষয়ে খুবই সচেতন থাকা প্রয়োজন তা হলো, কর্পূরের আগুন যেন গলায় না প্রবেশ করে। প্রবেশ করলে মৃত্যুও ঘটতে পারে। খেলাটা কঠিন হতে পারে, কিন্তু অসম্ভব বা অলৌকিক নয়। আমরা বিভিন্ন অলৌকিক বিরোধী অনুষ্ঠানে জিভে কর্পূর জ্বেলে দেখাই।

চন্দননগরে সাধুর মৃতকে প্রাণ-দান

১৯৮৩'র ২৫ মে ‘যুগান্তর’ দৈনিক পত্রিকায় এক সন্ন্যাসীর অলৌকিক ক্ষমতাবলে মৃতকে বাঁচানোর বিবরণ প্রকাশিত হলো। বিবরণে বলা হয়েছিল, চন্দনগরে রাস্তার ধারের একটা বেলগাছের তলায় আশ্রয় নিয়েছিলেন এক সন্ন্যাসী। রাস্তা দিয়ে যাচ্ছিল এক পুরুষের মৃতদেহ। সঙ্গে চলেছিলেন মৃতের স্ত্রী। বেলগাছের কাছে এসে রমণীটি ধনুক থেকে বেরিয়ে আসা তীরের মতোই আছড়ে পড়েন সন্ন্যাসীর পায়ে, সন্ন্যাসীকে রমণী অনুরোধ করেন, “আমার স্বামীকে বাঁচান। ওঁর জ্ঞাতি শত্রুরা ওঁকে বিষয় খাইয়ে মেরে ফেলেছে। ওঁকে না হলে আমি বাঁচব না।” কান্নায় ভেঙে পড়েন রমণী। |

 সন্ন্যাসী বলেন, “বাঁচানোর আমি কে? ঈশ্বরের কৃপা থাকলে আর তোমার সতীত্বের জোর থাকলে বাঁচবে। আমার দেওয়া এই বিভূতি শরীরে ও মুখে ছড়িয়ে দাও।”

 পরম বিশ্বাসে সাধুর আদেশ পালন করাতে মৃত উঠে দাঁড়ায়।

 বিবরণের মোটামুটি এই মোদ্দা কথা শুনে আমি স্বভাবতই সন্ন্যাসীর দর্শনলাভের তীব্র বাসনায় চন্দননগরের স্থানীয় বিভিন্ন শ্রেণির লোকের সঙ্গে কথা বলে এই সন্ন্যাসীর বিষয়ে জানতে চাই। যতদূর সম্ভব অনুসন্ধান চালিয়েও এই ধরনের কোনও সন্ন্যাসী বা প্রাণ ফিরে পাওয়া মৃত ও তার পরিবারের কারও সন্ধান পাইনি। এমন একটা চমকপ্রদ অলৌকিক ঘটনা ঘটে যাওয়া সত্ত্বেও শুধুমাত্র একজন সাংবাদিক ছাড়া স্থানীয় কেউই জানতে পারলেন না, এটাই আমার কাছে আরও বেশি চমকপ্রদ ঘটনা বলে মনে হয়েছে। পত্রিকায় এই সংবাদ পরিবেশনে আরও কয়েকটি অদ্ভুত জিনিস লক্ষ্য করেছি। ঘটনাটি ঘটার তারিখের কোনও উল্লেখ ছিল না। ছিল না মুতের নাম ঠিকানা। বিংশ শতাব্দীর এমন একটা বিস্ময়কর ঘটনাকে এমন ত্রুটিপূর্ণভাবে, হেলাফেলার সঙ্গে পরিবেশন করা হলো কেন? কেন খবরের সঙ্গে নবজীবন পাওয়া লোকটির, তার স্ত্রীর ও সন্ন্যাসীর ছবি এবং ঘটনায় সংশ্লিষ্ট যত জনের সম্ভব ইণ্টারভিউ ছাপা হল না? মৃতের জীবনদানের ঘটনা