সে-দিন আরও কিছু এটা-সেটা প্রশ্ন করে আমার ঠিকানা জিজ্ঞেস করলেন। একটা ঠিকানাও বললাম। বাবাঠাকুর ঠিকানাটা ডায়রিতে টুকে নিয়ে সাতদিন পরে আসতে বললেন। জানালেন সে-দিনই আমার সমস্যার কথা শুনবেন এবং সমাধানের উপায় বাতলাবেন।
সাত দিন পরে আবার গেলাম। এবার আমার সঙ্গী চিত্র-সাংবাদিক গোপাল দেবনাথ। আজও বাবা সতর্কতার সঙ্গেই কথা শুরু করলেন। এটা-সেটা নিয়ে গল্প-গাছার পর হঠাৎই বললেন, আপনি তো এখন স্টোন-টোন-এ বিশ্বাস করেন না। স্টোনগুলো কী করলেন?
বললাম, কিছুই করিনি, লকারে আছে।
বাবাঠাকুর মৃদু হাসলেন। বললেন, এ বিষয়ে আমি আপনার সঙ্গে একমত হতে পারলাম না। যে জিনিস প্রয়োজনে আসে না সে জিনিস ধরে রেখে লাভ কী? তারচেয়ে বিক্রি করে দিন। আপনারও পয়সা আসবে, অন্যেরও কাজে লাগবে। আংটিটা যেন কী স্টোনের ছিল?
বললাম, একটা নয় দুটো আংটি ছিল। একটা হিরের, একটা মুক্তোর।
কেমন ওজন ছিল ওগুলোর।
হিরেটা আধ রতির মতো, মুক্তোটা সাড়ে-ন’ রতির।
আমার উত্তর শুনে বাবাঠাকুর স্বস্তি পেলেন। তার টান-টান কথাবার্তা এবার সাবলীল হল।
প্রথম দিনের সাক্ষাতে সদানন্দ আমাকে কী কী প্রশ্ন করেছিলেন এবং তার কী কী উত্তর দিয়েছিলাম প্রতিটি স্মৃতিতে ধরে রাখতে সচেষ্ট ছিলাম। আমার মনে হয়েছিল বাবাঠাকুর আমাকে প্রবীর ঘোষ বলেই সন্দেহ করছেন। তাই এমন কিছু প্রশ্ন রেখেছিলেন এবং নিশ্চিত ছিলেন, উত্তরকর্তা প্রবীর ঘোষ হলে যেগুলোর মিথ্যে উত্তর দেব। হঠাৎ করে প্রশ্নের জবাব দিতে মিথ্যে বলতে বাধ্য হলে, স্বাভাবিক নিয়মে উত্তরদাতা দ্রুত ভুলে যান কী কী প্রশ্নের উত্তরে কী কী মিথ্যে বলেছিলেন।
সদানন্দর কাছে আমার সমস্যাগুলো মেলে ধরলাম। পাশাপাশি শুনছিলাম তার কথা। স্নাতক। ম্যাজিক শিখেছেন। মনোবিজ্ঞান নিয়ে পড়াশুনো করেছেন। অভিনয় করেছেন। সদানন্দের কথায়, যাদের ভগবান বলি, তারা আমাদেরই মত রক্তমাংসের শরীর নিয়ে এসেছিলেন। নিজের শক্তিকে জানতে পেরে তারা ভগবান হয়ে গেছেন। সদানন্দও একইভাবে ভগবান। ভক্তদের লেখাগুলো প্রসঙ্গে জানালেন, কোনও অতিরঞ্জন নেই। দু-পাতা বিজ্ঞান পড়া মানুষদের বেশির ভাগই পাশ্চাত্য সভ্যতার মোহে ভারতবর্ষের প্রাচীন সভ্যতা ও সংস্কৃতিকে ভুলতে বসেছে। অথচ তারা জানে না পাশ্চাত্য দেশগুলোই প্রাচীন ভারতের মুনি-ঋষিদের পুঁথি-পত্র ঘেঁটে আবার নতুন করে উদ্ধার করছে পৃথিবী কাঁপানো অনেক বিজ্ঞানের