পাতা:অলৌকিক নয় লৌকিক (প্রথম খণ্ড) - প্রবীর ঘোষ.pdf/১২৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১৩২
অলৌকিক নয় লৌকিক (প্রথম খণ্ড)

সে-দিন আরও কিছু এটা-সেটা প্রশ্ন করে আমার ঠিকানা জিজ্ঞেস করলেন। একটা ঠিকানাও বললাম। বাবাঠাকুর ঠিকানাটা ডায়রিতে টুকে নিয়ে সাতদিন পরে আসতে বললেন। জানালেন সে-দিনই আমার সমস্যার কথা শুনবেন এবং সমাধানের উপায় বাতলাবেন।

 সাত দিন পরে আবার গেলাম। এবার আমার সঙ্গী চিত্র-সাংবাদিক গােপাল দেবনাথ। আজও বাবা সতর্কতার সঙ্গেই কথা শুরু করলেন। এটা-সেটা নিয়ে গল্প-গাছার পর হঠাই বললেন, আপনি তাে এখন স্টোন-টোন-এ বিশ্বাস করেন। স্টোনগুলাে কী করলেন?

 বললাম, কিছুই করিনি, লকারে আছে।

 বাবাঠাকুর মৃদু হাসলেন। বললেন, এ বিষয়ে আমি আপনার সঙ্গে একমত হতে পারলাম না। যে জিনিস প্রয়ােজনে আসে না সে জিনিস ধরে রেখে লাভ কী? তারচেয়ে বিক্রি করে দিন। আপনারও পয়সা আসবে, অন্যেরও কাজে লাগবে। আংটিটা যেন কী স্টোনের ছিল?

 বললাম, একটা নয় দুটো আংটি ছিল। একটা হিরের, একটা মুক্তোর।

 কেমন ওজন ছিল ওগুলাের।

 হিরেটা আধ রতির মতাে, মুক্তোটা সাড়ে-ন’ রতির।

 আমার উত্তর শুনে বাবাঠাকুর স্বস্তি পেলেন। তার টান-টান কথাবার্তা এবার সাবলীল হল।

 প্রথম দিনের সাক্ষাতে সদানন্দ আমাকে কী কী প্রশ্ন করেছিলেন এবং তার কী কী উত্তর দিয়েছিলাম প্রতিটি স্মৃতিতে ধরে রাখতে সচেষ্ট ছিলাম। আমার মনে হয়েছিল বাবাঠাকুর আমাকে প্রবীর ঘােষ বলেই সন্দেহ করছেন। তাই এমন কিছু প্রশ্ন রেখেছিলেন এবং নিশ্চিত ছিলেন, উত্তরকর্তা প্রবীর ঘােষ হলে যেগুলাের মিথ্যে উত্তর দেব। হঠাৎ করে প্রশ্নের জবাব দিতে মিথ্যে বলতে বাধ্য হলে, স্বাভাবিক নিয়মে উত্তরদাতা দ্রুত ভুলে যান কী কী প্রশ্নের উত্তরে কী কী মিথ্যে বলেছিলেন।

 সদানন্দর কাছে আমার সমস্যাগুলাে মেলে ধরলাম। পাশাপাশি শুনছিলাম তার কথা। স্নাতক। ম্যাজিক শিখেছেন। মনােবিজ্ঞান নিয়ে পড়াশুনাে করেছেন। অভিনয় করেছেন। সদানন্দের কথায়, যাদের ভগবান বলি, তারা আমাদেরই মত রক্তমাংসের শরীর নিয়ে এসেছিলেন। নিজের শক্তিকে জানতে পেরে তারা ভগবান হয়ে গেছেন। সদানন্দও একইভাবে ভগবান। ভক্তদের লেখাগুলাে প্রসঙ্গে জানালেন, কোনও অতিরঞ্জন নেই। দু-পাতা বিজ্ঞান পড়া মানুষদের বেশির ভাগই পাশ্চাত্য সভ্যতার মােহে ভারতবর্ষের প্রাচীন সভ্যতা ও সংস্কৃতিকে ভুলতে বসেছে। অথচ তারা জানে না পাশ্চাত্য দেশগুলােই প্রাচীন ভারতের মুনি-ঋষিদের পুঁথি-পত্র ঘেঁটে আবার নতুন করে উদ্ধার করছে পৃথিবী কাপানাে অনেক বিজ্ঞানের