(hypnosis)। ডক্টর জেমস্ ব্রেইড সম্মোহন-ঘুমের ব্যাখ্যা করলেন বটে, কিন্তু, সম্মোহনকারী ও সম্মোহিত ব্যক্তির মধ্যে সম্মোহনকালে কী ধরনের সম্পর্ক গড়ে ওঠে সেই বিষয়ে সঠিক ব্যাখ্যা করতে পারলেন না। অতএব জানা গেল না, কীভাবে সম্মোহনকারী সম্মোহিত ব্যক্তিকে প্রভাবিত করেন। অর্থাৎ এটুকু বোঝা গেল যে, সম্মোহনকারী সম্মোহিতকে জেগে থাকা ও ঘুমের একটি অন্তর্বর্তী অবস্থায় নিয়ে এসে সম্মোহিতের মস্তিষ্কে বিশেষ একটি ধারণার সঞ্চার করতে থাকেন। যেই ধারণাটি সম্মোহিতের মস্তিষ্কে পৌছে দিতে সেই ধারণাটি সম্মোহিতের সামনে বারবার একঘেয়েভাবে আউড়ে যাওয়া হয়। সম্মোহনকারী ও সম্মোহিতের এই যোগাযোগটিকে মনস্তত্ত্বের ভাষায় বলা হয় ‘সম্পর্ক’ (rapport)।
উনিশ শতকের শেষ দশকে প্যারিসে শার্কো এবং ন্যানসিতে বার্নহাইম-এর নেতৃত্বে হিপনোসিস নিয়ে শুরু হলো নানা ধরনের পরীক্ষা-নিরীক্ষা।
হিস্টিরিয়া ও সম্মোহনের মধ্যে কিছু সাদৃশ্য লক্ষ্য করে শার্কো মতপ্রকাশ করলেন—সম্মোহন হলো তৈরি করা নকল হিস্টিরিয়া। সম্মোহিত ব্যক্তিরা সকলেই নিউরোটিক। সম্মোহনকারীর ধারণা সঞ্চারের (Suggestion) ব্যাপারটাকে আদৌ গুরুত্ব দিলেন না তিনি।
বার্নহাইম মত প্রকাশ করলেন, সম্মোহন ধারণা সঞ্চারের ফল। সব মানুষের মস্তিষ্কেই কম-বেশি কোনও ধারণা সঞ্চারিত করা যায়। অর্থাৎ, সব মানুষকেই সম্মোহিত করা যায়। অবশ্য সম্মোহনের গভীরতা সব মানুষের ক্ষেত্রে সমান নয়। তবে যদি বোধ-বুদ্ধি থাকে।
আরও অনেক নতুন নতুন তত্ত্ব নিয়ে এলেন মেতেল, জিমসেন, ভেরওর্ন এবং বেকটেরেফ। ভেরওর্ন বললেন, সম্মোহন হলো অতি জাগ্রত অবস্থা, অর্থাৎ এই অবস্থায় মানুষের মস্তিষ্ক থাকে সবচেয়ে সজাগ। বেকটেরেফ বললেন—সম্মোহন হলো স্বাভাবিক ঘুমেরই রকমফের।
এলেন ফ্রান্সের এক বিখ্যাত মনোবিদ স্যানেট। তিনি যে তত্ত্ব দিলেন সেটা শাকোর তত্ত্বের উন্নত সংস্করণ মাত্র।
ফ্রয়েড হাজির হলেন তাঁর সাইকো-অ্যানালিটিক থিওরি নিয়ে। ফ্রয়েডের মতে সম্মোহনকারী ও সম্মোহিতের মধ্যে সম্পর্ক বা rapport গড়ে ওঠে পারস্পরিক প্রেম বা ভালবাসার ফলে। প্রেমে পড়া ও সম্মোহিত হওয়া একই ধরনের ব্যাপার। ফ্রয়েডের তত্ত্বে সম্মোহিত অবস্থার বিবরণ এবং সম্মোহনকারী ও সম্মোহিতের মধ্যে সম্পর্ক সৃষ্টির ব্যাখ্যা মেলে। কিন্তু মেলে না সম্মোহিতের স্নায়ুতন্ত্রের ক্রিয়াকলাপ ও সম্মোহনের কারণ।
এলেন পাভলভ। বললেন, সম্মোহন আংশিক ঘুম। জেগে থাকা ও ঘুমের একটা অন্তর্বতী অবস্থা। স্বাভাবিক ঘুমে মস্তিষ্কের কর্মবিরতি বা নিস্তেজনা (inhibiation) বিনা বাধায় সারা মস্তিষ্কে ও দেহে ছড়িয়ে পড়ে। সম্মোহন-ঘুম