পাতা:অলৌকিক নয় লৌকিক (প্রথম খণ্ড) - প্রবীর ঘোষ.pdf/১৪১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১৪৪
অলৌকিক নয়, লৌকিক (প্রথম খণ্ড)

ধরনের পদ্ধতির আশ্রয় নেয়। সম্মােহনকারী যাকে সম্মােহন করতে চায়, তাকে শুইয়ে দেয় একটা সুন্দর নরম-সরম ছিমছাম বিছানায়। নরম বালিশে মাথা রেখে সারা শরীরটাকে হালকাভাবে ছড়িয়ে চিত হয়ে শুয়ে থাকেন রােগী। ঘরে জ্বলে খুব কম শক্তির নাইটল্যাম্প।

 সম্মােহনকারী ধীরে-ধীরে কিছুটা সুর করে টেনে-টেনে বলতে থাকেন, “আপনি এখন ঘুমিয়ে পড়ুন, ঘুমিয়ে পড়ুন। আপনার ঘুম আসছে। আপনার চোখের পাতা ভারী হয়ে যাচ্ছে। কপালের ও গালের পেশী শিথিল হয়ে যাচ্ছে। ঘাড়ের পেশী শিথিল হয়ে যাচ্ছে। এমনি করে হাত, বুক, পেট, কোমর, পা ইত্যাদি অঙ্গ শিথিল হয়ে যাচ্ছে, অবশ হয়ে আসছে। আপনার ঘুম আসছে, গভীর ঘুম আসছে।

 ...বাইরের সব শব্দ আপনার কাছে অস্পষ্ট হয়ে যাচ্ছে। বাইরের গাড়ির শব্দ, ট্রামের শব্দ, কোন শব্দই আপনার কানে যাচ্ছে না। আমার কথা ছাড়া অন্য কোনও শব্দ আপনি শুনতে পাচ্ছেন না। ...আপনার হাত-পা ভারী হয়ে গেছে। ঘুম আসছে...” সম্মােহনকারী টানাটানা একঘেয়ে সুরে বলে যেতে থাকে। এই কথাগুলাে শুনতে শুনতে সম্মােহনের ঘুমে আচ্ছন্ন হয়ে পড়েন শুয়ে-থাকা ব্যক্তি।

 সম্মােহিত ব্যক্তির উদ্দেশ্যে সম্মােহনকারীর এই কথা বা নির্দেশগুলােকে বলা হয় Suggestion', বাংলায় অনুবাদ করে বলতে পারি ধারণাসঞ্চার’ বা ‘চিন্তাসঞ্চার'।

 অবশ্য আরও অনেক পদ্ধতির সাহায্যেই সম্মােহন-ঘুম আনা সম্ভব। যে কোনও ইন্দ্রিয়কে মৃদু উদ্দীপনায় উত্তেজিত করলেই ঘুম আসবে।

 পাভলভ ও ফ্রয়েড দু’জনেই সম্মােহিত অবস্থাকে এক ধরনের ঘুমন্ত অবস্থা বলেই মত প্রকাশ করেছিলেন। সম্মােহন সম্বন্ধে জানতে গেলে ঘুম সম্বন্ধে দু-একটা কথা জানা খুবই প্রয়ােজন, কারণ, ঘুম আর সম্মােহন ঘনিষ্ঠভাবে সম্পর্কিত।

ঘুম ও সম্মােহন

 আমরা আমাদের জীবনের প্রায় তিনভাগের একভাগ ঘুমিয়েই কাটাই। মানুষ যখন ঘুমােয়, তখন কিন্তু তার সম্পূর্ণ মস্তিষ্কই কর্মহীন হয়ে পড়ে না। কিছু মস্তিষ্ক কোষ জেগে থাকে বা আধা-ঘুমন্ত অবস্থায় থাকে। সামগ্রিকভাবে উচ্চ-মস্তিষ্ক কাজ করে বিশ্রাম নিলেও কিছু জেগে থাকা কোষের সাহায্যে আমরা ঘুমের মধ্যেও নড়াচড়া করি, পাশ ফিরি, মশা কামড়ালে জায়গাটা চুলকোই, স্বপ্ন দেখি ইত্যাদি অনেক কিছু করি। এই অবস্থায় কিন্তু সব পেশিও শিথিল হয়ে পড়ে না। ঘুমের মধ্যে মলমূত্রের নির্গমন ব্যবস্থা নিয়ন্ত্রণ না হারায় সেদিকে মস্তিষ্ক লক্ষ্য রাখে।