বিষয়বস্তুতে চলুন

পাতা:অলৌকিক নয় লৌকিক (প্রথম খণ্ড) - প্রবীর ঘোষ.pdf/১৪৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।
সম্মােহন-আত্মসম্মােহন
১৪৭

 মস্তিষ্কের কোন স্নায়ু বা কেন্দ্রবিশেষ উত্তেজিত হলে, উত্তেজনার ঢেউ প্রথমে বৃত্তাকারে ছড়িয়ে পড়ে। এই ছড়িয়ে পড়ার প্রবণতাকে বলা হয় ‘irradiation’। সঙ্গে-সঙ্গে উত্তেজিত স্নায়ুকেন্দ্রের আশেপাশের স্নায়ুকেন্দ্রগুলোতে উত্তেজনার বিপরীতধর্মী নিস্তেজ অবস্থা বা ‘inhibition’ দেখা দেয়।

 ঘুমিয়ে পড়লে আমাদের ইন্দ্রিয়গুলো বাইরের উদ্দীপনায় সাড়া দেয় না। উলটো দিক থেকে বাইরের উদ্দীপনা মস্তিষ্কে প্রবেশ করার পথগুলো আমরা বন্ধ করে দিলে তাড়াতাড়ি ঘুম আসে। জার্মানে ডাক্তার স্ট্রামপল তার এক বালক রোগীর কথা বলতে গিয়ে বলেছেন, বালকটির একটি চোখ নষ্ট হয়ে গিয়েছিল। একটি কানে শুনতে পেত না। দেহের ত্বকের অনুভূতি শক্তিও গিয়েছিল নষ্ট হয়ে। বালকটির সুস্থ চোখ ও কানের দেখা ও শোনা কোন কিছু দিয়ে বন্ধ করে দেওয়ার কিছুক্ষণের মধ্যেই বালকটি ঘুমিয়ে পড়ত। পাভলভও এই ধরনের একটি রোগীকে তার ইন্দ্রিয়-উপলব্ধি বন্ধ করে দিয়ে ঘুম পাড়াতেন। গ্যালকিস পামের আর এক বিজ্ঞানী কয়েকটি কুকুরের ঘ্রাণ, শ্রবণ ও দর্শন-ইন্দ্রিয়গ্রাহী স্নায়ুগুলো কেটে ফেলে দেখেছিলেন, কুকুরগুলো সারা দিনরাতে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ২৩ ঘণ্টাই ঘুমিয়ে কাটাচ্ছে।

 মস্তিষ্কের স্নায়ুগুলোর অবসাদ থেকেই যে সব সময় ঘুম আসে, এমনটি নয়। পাভলভের মতে, ঘুম একরকম ‘conditioned reflex’ বা ‘শর্তাধীন প্রতিফলন’।

 ঘুমের ব্যাপারে নিয়মানুবর্তিতা বজায় রাখলে সাধারণত ঘুমের ব্যাঘাত ঘটে না। কিন্তু একজন লোকের দীর্ঘ ঘুমের পরেও একটা বিশেষ পরিবেশে একজন সম্মোহনকারী আবার তাকে ‘suggestion’ দিয়ে ঘুম পাড়িয়ে দিতে পারে, এই সম্মোহন-ঘুমের ক্ষেত্রে ঘুম ‘conditioned reflex’ বা শর্তাধীন প্রতিফলন। আমি আমার এক পুস্তক প্রকাশক ব্রজ মণ্ডলের কথা আগেই বলেছি।

ব্রজদা প্রতি রাত্রেই ঘুম আনতে ঘুমের ওষুধ খেতেন। আমি
একবার ঘুমের জোরাল ওষুধ বলে ভিটামিন ক্যাপসুল
দিয়েছিলাম। ক্যাপসুল খেয়ে ব্রজদার খুব ভাল ঘুম
হয়েছিল। আমার ‘suggestion’ বা ধারণা
সঞ্চারের জন্য ভিটামিন ক্যাপসুল
‘conditioned stimilus’ বা
শর্তাধীন উদ্দীপক বস্তুর
কাজ করেছিল।

 নানা ধরনের রোগের ওপরই হিপনোটিক সাজেশন বা সম্মোহন ধারণা সঞ্চারের ফলাফল ব্যাপকভাবে পরীক্ষা করে দেখা হয়েছে। দেখা গেছে স্ট্যামারিং,