পাতা:অলৌকিক নয় লৌকিক (প্রথম খণ্ড) - প্রবীর ঘোষ.pdf/১৫১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।
১৫৪
অলৌকিক নয় লৌকিক (প্রথম খণ্ড)

হাজির হয়, সৃষ্টি হয় ক্ষত। অনিশ্চয়তার কারণ দুর না করলে রােগের পুনঃ আক্রমণের সম্ভাবনা দুর হবে না। সম্মােহন-চিকিৎসার শেষে রােগীর একটা পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা হয়েছিল, ছােট একটা সরকারি কাজে নিযুক্ত করা হয়েছিল। ফল পাওয়া গিয়েছিল হাতে হাতে। রােগী তার স্বাভাবিক জীবন ফিরে পেয়েছিল।

প্রথম বিশ্বযুদ্ধে যুদ্ধরত সৈনিকদের মধ্যে হিস্টিরিক-অন্ধত্ব ও স্মৃতিভ্রংশের অনেক ঘটনা ঘটতে দেখা গেছে। এদের প্রতিটি অন্ধত্ব ও স্মৃতিভ্রংশ বহিরাগত কোনও কারণে হয়নি, হয়েছে মস্তিষ্ক-কোষের জন্য। ওদের অবচেতন মন রক্ত দেখতে চাইছে না। হত্যার বীভৎস স্মৃতি ধরে রাখতে চাইছে না। এই না চাওয়ার তীব্র আকুতি থেকেই দৃষ্টি হারিয়েছে, স্মৃতি হারিয়েছে।

আঘাতে যে বেশি ভয় পায়, তার ব্যথা বেশি লাগে ও রক্তপাত বেশি হয়। অপারেশনের ক্ষেত্রেও ভয় পেলে ব্যথা ও রক্তপাত বাড়ে। যে রােগী আপ্রাণ বাঁচতে চায় তার আরােগ্য দ্রুততর হয়। আবার, শুধু চিন্তার প্রভাবেই ঘা সৃষ্টি হতে পারে। উদ্বেগ ও দুশ্চিন্তার জন্যে পেটে অত্যধিক অ্যাসিড নিঃসৃত হয় । দীর্ঘকাল এই রকম চলতে থাকলে ঘা তৈরি হয় ও রক্তক্ষরণ হয়। গ্যাসট্রিক আলসার, কোলাইটিস ও কিছু ক্যান্সার কেবলমাত্র মানসিক কারণেই হয়ে থাকে। ভয় পাওয়া যদিও মানসিক ব্যাপার, কিন্তু সঙ্গে সঙ্গে শরীরে তার বিরাট প্রভাব পড়ে। ভয়ে মুখ ফ্যাকাশে হয়ে যায়, শরীর ঘামে, অনেক সময় পায়খানা বা প্রস্রাবের বেগ দেখা যায়। রাগ হলে রক্তচাপ বাড়ে, চোখ-মুখ রক্তাভ হয়ে ওঠে।

মস্তিষ্কের বিশেষ গঠন-বৈশিষ্ট্যের অধিকারী বা হিস্টিরিয়া রােগীরা বিভিন্ন ধরনের অন্ধবিশ্বাস, কুসংস্কার এবং সংবেদনশীলতার জন্য প্রায় সব ক্ষেত্রেই নিজের অজান্তে স্বনির্দেশ (auto-suggestion) পাঠিয়ে সমব্যথী-চিহ্ন বা ওই জাতীয় অস্বাভাবিক সব কাণ্ডকারখানা ঘটিয়ে ফেলেন।