ওর মানসিক ভারসাম্যের যে অভাব দেখতে পেলাম, সেই অভাবটা যত তাড়াতাড়ি সম্ভব দূর করার প্রয়োজন রয়েছে।
এই মুহূর্তে অফিসের পাশাপাশি চেয়ারে বসে সম্মোহন-ঘুম এনে Suggestion দিয়ে ওর মানসিক জোর ও ভারসাম্য ফিরিয়ে আনার চিন্তা একান্তই অবাস্তব। অথচ, ওর ফলিত জ্যোতিষ-বিশ্বাসকে এই মুহূর্তে যুক্তির কূটকৌশলে ভাঙার চেষ্টা না করে, যদি ওর বিশ্বাসকে কাজে লাগিয়েই মনোবল বাড়াতে পারি, বিশ্বাস সৃষ্টি করতে পারি যে, ও খুন হবে না, তবে অরুণের সঙ্গেসঙ্গে ওর পরিবারের সকলেরও মানসিক ভারসাম্য ফিরে আসবে।
অরুণের হাত দেখে বললাম, “তোর রক্তপাতের কারণ মঙ্গল। তুই, ডান হাতে একটা ২৫ থেকে ৩০ গ্রাম ওজনের তামার বালা পর। বালাটা যে কোন চেনা সোনার দোকানে বললে বানিয়ে দেবে। কয়েকটা কথা স্পষ্ট মনে রাখবি। (১) বালাটা বানাতে দোকানদার যে দাম চাইবে, সেই দামই দিবি। কোন দরদাম করবি না। (২) বালাটা শোধন করিয়ে আগামী মঙ্গলবার ভোরে সূর্য ওঠার সঙ্গেসঙ্গে স্নান করে ডান হাতে পারবি। (৩) বালাটার ওজন কম হলে কাজ হবে না। কিন্তু বেশি হলে বালাটা পরার পর সারা শরীরে যেন বিদুৎ খেলে যাবে, গা প্রচণ্ড গরম হয়ে উঠবে।
সেদিনই বাড়ি ফেরার পথে পাড়ার সেকরার কাছে তামার বালা বানাতে দিয়ে গেল অরুণ। তারপর বোধহয় দিন-দু’য়েক পরেই একদিন আমাকে বালাটা দেখাল। বলল, “ঠিক আছে?”
বললাম, “বালাটা খাঁটি তামার বটে, কিন্তু ওটার ওজন তো মনে হচ্ছে অনেক বেশি। তুই ওজন দেখে নিসনি?”
অরুণ বলল, “না, নেওয়ার সময় আর ওজন দেখে নিইনি। ঠিক আছে, আজই যাওয়ার পথে দোকান থেকে ওজনটা জেনে যাব। আজ রাতে বালাটা শোধন করে নেব, কালই তো পরব।”
পরের দিন অরুণ অফিসে এলো ঝোড়ো কাকের মতো। বালাটা আমার দিকে এগিয়ে দিল। বালার বাঁকানো, জোড়া না লাগানো মুখের কাছটা এমনভাবে হাঁ হয়ে আছে যে, বুঝতে অসুবিধে হয় না, বালাটা যথেষ্ট শক্তি ব্যয় করে হাত থেকে তাড়াতাড়ি খোলা হয়েছে।
অরুণ যা বলল, তাতে জানতে পারলাম, কাল সোনার দোকানে বালাটা ওজন করিয়ে দ্যাখে, ওটা প্রায় ৪৫ গ্রামের। রাতে শোধন করিয়ে সকালে পরেছে। তারপর বেরিয়ে পড়েছে অফিসে। ট্রেনে ওঠার পর সারাগায়ে কেমন একটা জ্বালা ছড়িয়ে পড়তে থাকে। শরীর গরম হয়ে উঠতে থাকে, অসহ্য গরম। সেই সঙ্গে গায়ের লোমগুলো খাড়া হয়ে ওঠে, শিরশির করে ওঠে। গোটা শরীরটায় যেন বিদ্যুৎ খেলে যায়। অরুণের বুঝতে অসুবিধে হয় না, এই সবই বেশি ওজনের