বিষয়বস্তুতে চলুন

পাতা:অলৌকিক নয় লৌকিক (প্রথম খণ্ড) - প্রবীর ঘোষ.pdf/১৭৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১৭৬
অলৌকিক নয় লৌকিক (প্রথম খণ্ড)

কেদারনাথ? ইনিই তাে সেদিন স্বামীর মুখে জল ও প্রসাদ তুলে দিয়েছিলেন।

 অমিতের বৌদি ঈশ্বরে বিশ্বাসী, দীর্ঘদিনের সংস্কার, তীর্থক্ষেত্রের ধর্মীয় পরিবেশ, প্রচণ্ড মানসিক আঘাতের আবেগ ও সন্ন্যাসীদের আধ্যাত্মিক কথাবার্তা এই ধরনের Visual hallucination সৃষ্টি করেছিল।

 আমার সহকর্মী মণি দালালের এক আত্মীয় হঠাৎই একদিন আবিষ্কার করলেন তার বাড়িতে কলকাতা কর্পোরেশনের যে জল আসে তাতে প্রস্রাবের গন্ধ। তার দৃঢ় ধারণা হলাে এর পেছনে আছেন তাঁরই এক আত্মীয়। বাড়ির লােকজনেরা বােঝালেন, এটা অলীক চিন্তা। ভদ্রলােক কিন্তু বুঝলেন না। তিনি সন্দেহ প্রকাশ করলেন, দুষ্টু আত্মীয়টি কর্পোরেশনের লােকজনদের হাত করে প্রস্রাব মেশাচ্ছেন।

 দীর্ঘদিন ধরে আর স্নান করেননি তিনি। অতি সামান্য জল খেতেন এবং সেই জলও নিজেই নিয়ে আসতেন দূরের এক টিউবওয়েল থেকে। এটা ঘ্রাণভিত্তিক ভ্রান্তির (Olfactory Hallucination) উদাহরণ।

 আমার অফিসের এক বড় অফিসার তার চেম্বারে ডেকে আমাকে বললেন, তাঁর স্ত্রী বােধহয় কোনও তুকতাক করেছে, অথবা কোন পিশাচ ঘরে ঢুকেছে। শাশুড়ির মৃত্যুর পর থেকে তিনি ঘরে পিশাচের গন্ধ পাচ্ছেন। পিশাচের গন্ধ তিনি কী করে চিনলেন, কে জানে? ভদ্রলােক আমাকে একদিন তাঁর বাড়িতেও নিয়ে গিয়েছিলেন। আমি ‘পিশাচের’ কোনও গন্ধ না পেলেও তিনি কিন্তু তখনও গন্ধ পাচ্ছিলেন, এটাও একটা ঘ্রাণভিত্তিক হ্যালুসিনেশনের দৃষ্টান্ত।

 একদিন আড্ডা দিচ্ছিলাম চিত্রকর গণেশ হালুইয়ের সল্টলেকের বাড়িতে। সেই আড্ডায় আমরা দু’জন ছাড়া ছিলেন আর একজন ছিলেন আর একজন শিল্পী। তার নাম প্রকাশে একটু অসুবিধে থাকায় ধরে নিচ্ছি তাঁর নাম শ্যামবাবু। শ্যামবাবু শ্রীমার পরম ভক্ত। সঙ্গের ওয়ালেটে সব সময় শ্রীমার ছবি থাকে। একদিন তিনি অসতর্কভাবে রাস্তা পার হতে গিয়ে ডবলডেকার বাসে চাপা পড়তে পড়তে বেঁচে যান। সেদিনের আড্ডায় শ্যামবাবুর প্রতিটি কথা আক্ষরিকভাবে মনে না থাকলেও কথার ভাবটুকু আমার স্মৃতিতে জমা পড়ে রয়েছে। শ্যামবাবু মােটামুটিভাবে সেইদিন এই ধরনের কথা বলেছিলেন, বুঝতে পারছিলাম চাপা পড়বই। আর এক মুহুর্তের মধ্যে আমার জীবন শেষ হয়ে যাবে। শেষ সময়ে শ্রীমাকে স্মরণ করতেই ঘটে গেল অলৌকিক ঘটনা। দেখতে পেলাম আমার পাশে শ্রীমা। তারপরই অনুভব করলাম একটা হ্যাঁচকা টান। হুড়মুড় করে চলে গেল বাসটা। দেখলাম আমি বেঁচে আছি। সেদিনের সেই অবিশ্বাস্য ঘটনার কথা বলতে গেলে আজও আমার গায়ে কাঁটা দিয়ে ওঠে।