খবরটা ছড়িয়ে পড়াতে বহু সাধারণ মানুষ এই ধরনের ছলনায় ও চতুরতায় ক্ষিপ্ত হলেন। সম্ভবত সাধারণের রোষ থেকে বাঁচতে মায়ের প্রধান ভক্তেরা আদ্যামূর্তি বিসর্জন দিলেন গঙ্গায়। রটালেন, মা স্বপ্নে বিসর্জন দিতে আদেশ করেছেন।
এরপর বেশ কিছু বছর আদ্যামায়ের মন্দির বিগ্রহ-শূন্য থাকার পর বর্তমানের আদ্যামূর্তিটি তৈরি করিয়ে প্রতিষ্ঠা করা হয়।
আমাদের দেশে এই ধরনের ঘটনা অবশ্য বহুবার বহু জায়গায় ঘটেছে। কেউ স্বপ্ন দেখে মাঠে গিয়ে খুঁজে পান স্বপ্নের দেবমুর্তিকে, কেউ দেবমুর্তিকে আবিষ্কার করেন গরু খুঁজতে গিয়ে। দেখেন গরু একটি মূর্তির কাছে দাঁড়িয়ে আছে, গরুর বাঁট থেকে আপনা-আপনি দুধ ঝরে পড়ছে; কেউ নতুন কাটা পুকুরে আবিষ্কার করেন দেবমুর্তি। দেবমূর্তি আবিষ্কারের সঙ্গে-সঙ্গেই শুরু হয়ে যায় প্রচার। স্বপ্নে পাওয়া দেবতার সঙ্গে দু-একটা অলৌকিক ঘটনা জুড়ে দিতে পারলে তো কথাই নেই। অর্থ, সম্মান, প্রতিপত্তি সবই একে একে এসে পড়বে পূজারীর হাতে।
মানুষের দুঃখকষ্ট, অসহায়তা ও মানসিক দুর্বলতার পরিণতিতে
এসেছে ঈশ্বর-বিশ্বাস। ঈশ্বর মানুষ সৃষ্টি করেনি,
মানুষই সৃষ্টি করেছে ঈশ্বর।
ধর্মের নামে লোক ঠকাবার উপদেশ কৌটিল্যের অর্থশাস্ত্রে
সাধারণ মানুষের ঈশ্বর বিশ্বাসের সুযোগ নিয়ে আখের গোছানোর ধান্দা পৃথিবীর ইতিহাসে অতি প্রাচীন কাল থেকে চলে আসছে। ভারতও এর বাইরে নয়। ২২০০ বছর আগে ভারতবর্ষে ঈশ্বরের নামে লোকঠকানো যে ব্যাপকভাবে প্রচলিত ছিল কৌটিল্যের ‘অর্থশাস্ত্রে’ তার উল্লেখ পাই। সম্রাট চন্দ্রগুপ্তের মন্ত্রী কৌটিল্য তাঁর বর্ণাশ্রম নীতি রক্ষার জন্য ‘অর্থশাস্ত্র’-এর পঞ্চম অধিকরণের দ্বিতীয় অধ্যায়ে কিছু উপায় বর্ণনা করেছেন। কৌটিল্য-বর্ণিত নীতি ও উপদেশগুলো নিয়ে আলেচনা করলে দেখতে পাবেন কী প্রচণ্ড মিথ্যার আশ্রয় নিয়ে তিনি প্রজাশোষণ করতে উপদেশ দিয়েছেন।
“কোন প্রসিদ্ধ পুণ্যস্থানে ভূমি ভেদ করে দেবতা উঠেছেন বলে প্রচার করতে হবে। অথবা রাত্রিতে বা নির্জনে একটি দেবতা স্থাপন করে ও এই উপলক্ষে উৎসবাদি ও মেলা বসাতে হবে। শ্রদ্ধালু লোকের প্রদত্ত ধন দেবতাধ্যক্ষ গোপনে রাজসমীপে অর্পণ করিবেন।” (কৌটিল্য অর্থশাস্ত্র, ৫ম অধিকরণ, ২য় অধ্যায়, ৯০তম প্রকরণ)।
‘দেবতাধ্যক্ষ’ কথাটি লক্ষ্য করুন। সেনাদের দেখার দায়িত্ব ও পরিচালনার দায়িত্ব