পাতা:অলৌকিক নয় লৌকিক (প্রথম খণ্ড) - প্রবীর ঘোষ.pdf/১৮১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।
১৮৪
অলৌকিক নয় লৌকিক (প্রথম খণ্ড)
১৮৪

১৮৪ অলৌকিক নয়, লৌকিক (প্রথম খণ্ড) মন্দিরগুলাে, যেগুলাে আজও লক্ষ-কোটি ভক্তদের আকর্ষণ করে ও আদায় করে প্রণামী। প্রণামীর একটা অংশ যেত রাজকোষে। প্রাচীন ঐতিহ্যের সাক্ষ্য হিসেবে দাঁড়িয়ে থাকা কিছু মন্দির আজও ভারতের বিখ্যাততম ধনীদেরও ঈর্ষা জাগাবার মতাে সম্পদের অধিকারী। স্বাধীন ভারতে মন্দিরের সম্পদ মন্দিরের ট্রাস্টি বাের্ডের। অর্থাৎ ধর্মগুরুদের। এক-একজন ধর্মগুরুর সম্পদ দেশের শ্রেষ্ঠ শিল্পপতিদের সম্পদকেও হার মানায়। ভারত সত্যিই বিচিত্র দেশ—প্রাচীন খারাপ ঐতিহ্যকে গর্বের সঙ্গে ধারণ করে আছে। সােমনাথ মন্দিরের অলৌকিক রহস্য সােমনাথ মন্দিরের কথা প্রাইমারী স্কুলের গণ্ডি পেরােনাে সকলেরই জানা। বিশ্ববিখ্যাত সেই মন্দিরের বিপুল ধনরত্ন একাদশ শতাব্দীতে লুণ্ঠন করেছিলেন গজনীর সুলতান মামুদ। সােমনাথ মন্দিরের শুধু ঐশ্বর্যই সুলতানকে আকর্ষণ করেনি, আকর্ষণের আর একটি প্রধান কারণ ছিল মন্দিরের বিগ্রহের অলৌকিকত্ব। সােমনাথ মন্দিরের দেবমূর্তির অলৌকিকত্বের কথা যুগ-যুগ ধরে দেশ থেকে দেশান্তরে ছড়িয়ে পড়েছিল। দেব-বিগ্রহ কোন বেদিতে বসানাে ছিল না। বিগ্রহ অবস্থান করতেন মন্দিরের মাঝখানে শূন্যে। শূন্যে ভাসমান সােমনাথদেবকে দর্শনের জন্য দূর-দূরান্ত থেকে বহু কষ্ট স্বীকার করেও হাজির হতেন লক্ষ লক্ষ ভক্ত। অলৌকিকের আকর্ষণ বড় আকর্ষণ। চাক্ষুষ অলৌকিক শক্তির প্রকাশ এবং জাগ্রত দেবতাকে দেখার সুযােগ কে-ই বা অবহেলায় নষ্ট করবে? কে-ই বা জীবন্ত দেবতাকে দেখে সব পাপ থেকে মুক্ত হয়ে অক্ষয় স্বর্গবাসের সুযােগ নেবে না? ধনী-দরিদ্র, রাজা-প্রজা নির্বিশেষে লক্ষ-কোটি ভক্ত দর্শক এসেছেন এব দেবতার অসাধারণত্ব ও অলৌকিকত্ব দেখে নিজেদের সাধ্যমতাে প্রণামী উজাড় করে ঢেলে দিয়ে গেছেন। দীর্ঘ বছরের সঞ্চয়ে মন্দিরে জমে উঠেছিল কুবেরের ঐশ্বর্য। | শূন্যে ঝুলন্ত দেবমূর্তির অসাধারণত্ব সুলতান মামুদকে আকর্ষণ করে। মামুদ শুধু মন্দিরের ধনরত্ন লুঠ করেই বিরত হননি। তিনি যুক্তিবাদী মন নিয়ে দেবমূর্তির শুন্যে ঝুলে থাকার কারণ জানতে উৎসুক হয়ে ওঠেন। তাঁর সঙ্গে আসা বিজ্ঞানী, ধাতুবিদ ও বাস্তুকারদের নিয়ে মূর্তিটি পরীক্ষা করে দেখেন যে ওটি লােহার তৈরি। বিশেষজ্ঞরা আরও মত প্রকাশ করেন যে, সম্ভবত মন্দিরের দেওয়ালের চারপাশে চুম্বক-পাথর বসানাে আছে। এমন করে চুম্বক-পাথর বসানাে হয়েছে, যাতে, লােহার মূর্তিটি মাঝামাঝি একটা জায়গায় এনে ছেড়ে দিলে বিভিন্ন প্রান্তের চুম্বক-আকর্ষণে শূন্যে ভেসে থাকছে।