বিষয়বস্তুতে চলুন

পাতা:অলৌকিক নয় লৌকিক (প্রথম খণ্ড) - প্রবীর ঘোষ.pdf/১৮৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১৯০
অলৌকিক নয় লৌকিক (প্রথম খণ্ড)

 দমদমে আমার ফ্ল্যাটে খোঁজখবর-এর গাড়ি এলো সকাল ৬টায়। সঙ্গী ফটোগ্রাফার দেবজ্যোতি ও আশিস। সকাল ৮টায় হাবড়া ২ নম্বর রেল গেটে পৌছে গেলাম। আমাদের জন্য সঙ্গীদের নিয়ে অপেক্ষা করছিলেন সুদীপ। সুদীপকে গাড়িতে তুললাম। ওঁর সঙ্গীদের বললাম, আমাদের অপরিচিত হিসেবে আমাদের কাছাকাছি থেকে খেজুর তলার দিকে এগোতে। কোন সিচুয়েশনে কী করতে হবে তাও বোঝালাম। এখান থেকেই ভ্যান রিকশা, সাইকেল আর অটোর বিশাল ভিড়। বাস, ট্রেকার, মোটরগাড়ি ও মোটর বাইকেরও দেখা মিলছে মাঝে-মাঝেই। ওদের গন্তব্যস্থল কুমড়ো কাশীপুরের মোড়।

 হাওড়া-মগরা রোড ধরে ভিড় ঠেলে এগোলাম। এসে পৌছলাম কুমড়ো কাশীপুর মোড়ে। এখান থেকে সবাই ঢুকবে পিচ রাস্তা ছেড়ে কাঁচা রাস্তা ধরে। মোড়ের পাশে গাড়ি দাঁড় করালাম। দেবজ্যোতিকে বললাম ‘বুম’ থেকে (যেটা বাগিয়ে ধরে সাক্ষাৎকার নেওয়া হয়) ‘খোঁজখবর’-এর ‘লোগো’টা খুলে নিতে। এখন থেকে আমাদের প্রত্যেককে ভুলে যেতে হবে—খোঁজখবরের হয়ে ছবি তোলা হচ্ছে। আমি আর দেবজ্যোতি ছাড়া সুদীপ আমাদের টিভি টিমের সঙ্গী হিসেবে পরিচয় দেবেন। তাপস রায় তিন সঙ্গী ও এক সঙ্গিনী এবং মা, বউদি-কে নিয়ে আমাদের অপেক্ষায় ছিলেন ওখানে। তাদের প্রত্যেকের করণীয় বুঝিয়ে দিলাম।

 মোড়ের ভিড় সামলাচ্ছে গাদাগুচ্ছের ভলেণ্টিয়ার। ২৫-৩০ জন কিশোর থেকে যুবক ফেরি করছে খেজুর তলার বুড়ি মা’র পাঁচালী। ২০-২৫ জন লেখকের লেখা পাঁচালিগুলোর দাম ৫ টাকা থেকে ১০ টাকা। পৃষ্ঠা সংখ্যা ৮ থেকে ১৬। খেজুর তলার হাতে আঁকা ছবির ছাপানো কপি বিক্রি হচ্ছে ১০ টাকা করে। নকুলদানা-ধুপকাটি-ফুল-বেলপাতার প্যাকেট বিক্রি হচ্ছে ৫ টাকা, সবের-ই দেদার বিক্রি। চা-বিস্কুট-ওমলেট-পরোটা-ঘুগনি-আলুরদমের দোকানগুলোয় গিজগিজ করছে ভিড়। খেজুরতলার কল্যাণে ওদের শ্রী ফিরেছে।

 দেবজ্যোতি কিছুক্ষণ ছবি তুললো। আমাদের গাড়ি এগোলো কাঁচা রাস্তা ধরে। কাঁচা রাস্তায় দু-চার দিন হল রাবিশ পড়েছে। হাজারে হাজারে মানুষ চলেছেন ভারতীনগর কলোনি। সেখান থেকে জলা পেরিয়ে যেতে হবে পারপাটনা গ্রামের খেজুরতলায়। খেজুরতলার কৃপায় বহু নতুন অটো পথে নেমেছে। অত্যন্ত ধীর গতিতে এগুচ্ছি। আগে-পিছু হেঁটে, ভ্যান রিকশায়, অটোয়, সাইকেলে, বাইকে, কারে ভক্তরা চলেছেন। হাজারে-হাজারে মানুষ ফিরছেনও। ভ্যান রিক্সায় পঙ্গু, অশক্ত, শায়িত রোগী-রোগিনী বেশি। ওঁদের অনেকেই এসেছেন দক্ষিণ ২৪ পরগনা, হুগলি, নদীয়া, উত্তর ২৪ পরগনা এমনকী বাংলাদেশের খুলনা থেকে। রাত কাটিয়েছেন হাবড়া স্টেশনে অথবা যশোর রোডের পাশে গজিয়ে ওঠা বুড়িমার যাত্রীনিবাসে। যাত্রীদের শতকরা ৯০ ভাগ-ই অত্যন্ত গরিব ও শিক্ষার সুযোগ না পাওয়া মানুষ।