বিষয়বস্তুতে চলুন

পাতা:অলৌকিক নয় লৌকিক (প্রথম খণ্ড) - প্রবীর ঘোষ.pdf/১৮৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
পীঠস্থান ও স্থান মাহাত্ম্য রহস্য
১৯১

 রাস্তা তৈরির কাজ চলছে। পঞ্চায়েতের ব্যবস্থাপনায় যাত্রীদের সুবিধার জন্য বহু মজুর খাটছেন মাটির পথকে রাবিশ ঢেলে গাড়ি চলাচলের উপযুক্ত করতে।

 দু কিলোমিটার গিয়ে আমাদের গাড়ি থামাতে হল। ভ্যান রিকশা থেকে মোটর বাইক—সবার যাত্রাপথ এখানেই শেষ। জায়গাটার নাম ভারতীনগর কলোনি। দু’দিন আগের অজ গাঁ, আশ্চর্য জাদুতে জমজমাট। গাড়ি জমা রাখতে হচ্ছে কলোনীর কুঁড়েঘরগুলোর সামনে। টাকা আদায় করছেন বাড়ির মেয়ে-বউরা। দক্ষিণা সাইকেল থেকে গাড়ি—এক টাকা থেকে পাঁচ টাকা। রাতারাতি প্রচুর দোকান গজিয়ে উঠেছে। দোকানে পাওয়া যাচ্ছে চা, বিস্কুট, ওমলেট, মুড়ি, ঘুগনি, ফুল-বাতাসা-ধূপ-বুড়িমা’র পাঁচালি, ছোটদের খেলনা-বেলুন, পান-বিড়ি-সিগারেট ইত্যাদি।

 আর কয়েক পা এগোলেই বিস্তীর্ণ জলাভূমি। জলাভূমি পার হয়ে আবার তিন কিলোমিটারের মতো হাঁটলে খেজুরতলা, বুড়িমা’র থান। জলা পার হতে রয়েছে সাঁকো ও নৌকো। সাঁকোয় পার হতে এক টাকার টিকিট। নৌকোয় দু’টাকা।

 ভারতীনগর কলোনিতে আমরা পা দিতেই খেজুরতলা মন্দির কমিটির নেতারা ও স্বেচ্ছাসেবকরা আমাদের গাড়ি ঘিরে ধরলেন। কোন টিভি কোম্পানির হয়ে আসছি, কীভাবে বিষয়টা দেখাতে চাই ইত্যাদি অনেক প্রশ্ন তাঁদের। মন্দির কমিটির কেউই ‘কাচ্চা খিলাড়ি’ নন। তাঁরা রাজনীতি করেন। সি পি এম থেকে তৃণমূল—সবার শান্তিপূর্ণ সহবস্থান। মাইক ফুঁকে ভক্তদের উদ্দেশে জানান হচ্ছে—কোনও অসুবিধে হলে তাঁরা মন্দির কমিটির অফিসে যোগাযোগ করতে পারেন। বাঁশের খুঁটির ওপর টিনের চাল ও রঙিন কাপড়ে ঘেরা মন্দির কমিটির অফিস, মন্দির কমিটির অনুরোধে আমাদের চা ওমলেট খেতে হল। আমাদের উপর নজর রাখার জন্য তিনজন স্বেচ্ছাসেবী দিয়ে দিলেন। ওই তিনজন এখন গাইড।

 নৌকোয় উঠলাম আমরা। যাত্রী আরও অনেকেই। গাইডদের কল্যাণে আমরা বিনে পয়সার সওয়ার। লগি ঠেলে মিনিট পনেরো জল কেটে আমরা পারে পৌঁছলাম। ডাঙায় নামতেই জুতো সমেত পা আধ-হাঁটু জলের তলায়। আলপথ আর ধানখেত মিলে-মিশে একাকার লক্ষ মানুষের দাপাদাপিতে। চ্যাট-চ্যাটে কাদা ভেঙে পতন সামলাতে সামলাতে এগোচ্ছি আমরা। হাজারে-হাজারে কাতারে কাতারে মানুষের মহামিছিল। একদল যাচ্ছেন। একদল ফিরছেন। দূরে দেখা যাচ্ছে সাঁকো পথে পিঁপড়ের সারির মত মহামিছিল। এঁটেল মাটি থেকে পা তুলে তুলে পতন সামলাতে সামলাতে এগোনোর চেষ্টা আমাদের মত অনভিজ্ঞ শহরবাসীদের কাছে যে কী কষ্টকর—তা হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছিলাম। তিন কিলোমিটার পথ পেরুতে আমাদের প্রায় আড়াই ঘণ্টা সময় লাগল।

 একটা লম্বা খেজুর গাছ ঘিরে বিশাল এলাকা জুড়ে উঁচু টিনের শেড গড়ে