পাতা:অলৌকিক নয় লৌকিক (প্রথম খণ্ড) - প্রবীর ঘোষ.pdf/১৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।
২২
অলৌকিক নয় লৌকিক (প্রথম খণ্ড)

গিয়েছিল। অলৌকিতার পক্ষে নানা গাল-গপ্পোকে ‘সত্যি’ বলে চালাতে চাইছিল রুশ সরকারি পত্র-পত্রিকা। কমিউনিস্টদের এই ‘ঘোমটার তলায় খেমটা নাচ’ দেশবাসীরা কী চোখে দেখছে, তা বোঝার সামান্যও চেষ্টা করেনি রাশিয়ার গদীতে বসা কমিউনিস্টরা। বুঝেছিল কমিউনিস্টদের ছুঁড়ে ফেলতে এগিয়ে আসা কিছু নেতা।

 যেখানে শাসকদের বিরুদ্ধে জনগণের ক্ষোভ আছে, কিন্তু প্রকাশ নেই, সেখানে মুষ্টিমেয় নেতাও সরকার উল্টে দিতে পারে, সমাজ পাল্টে দিতে পারে—রাশিয়ার ইতিহাস তেমন-ই শিক্ষা দিয়েছে।

 সমাজকে পাল্টে দেওয়ার পথ একটা নয়। বহু। প্রয়োজনে মানুষকে সচেতন করতে হয়। সমাবেশিত করে চালিত করতে হয়। কখনও বা গণ-হিস্টিরিয়া তৈরি করে কার্যোদ্ধার করা হয়। শিক্ষা-সংস্কৃতিতে পিছিয়ে থাকা জনগোষ্ঠীকে হিস্টিরিক করে তুলে ‘ধর্মগুরু’ বা ‘ধর্মযোদ্ধা’রা আত্মঘাতী বাহিনী তৈরি করে ফেলে। যেমনটা দেখেছি ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেণ্টার ধ্বংসের সময়। আবার আদর্শের জন্য উচ্চমেধার মানুষদের আত্মবলি দিতে দেখেছি গত শতকের ছয়-সাতের দশকে নকশাল আন্দোলনে।

 সমাজকে পাল্টাবার স্বপ্ন দেখা মানুষরা তাদের সংগৃহীত জ্ঞান থেকে নতুন নতুন পদ্ধতি আবিষ্কার ও প্রয়োগ করতে পারে। সশস্ত্র সংগ্রামের মধ্য দিয়ে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা দখল কি বর্তমান সময়ে আদৌ সম্ভব? সংঘর্ষ বিনা কি সাম্যের সমাজ গড়া সম্ভব? সাম্যের শত্রুরা কি বিনা বাধায় কাজ করতে দেবে? সবগুলো প্রশ্নের উত্তর ‘না’। সাম্যের সমাজ গড়তে গেলে আক্রমণের মোকাবিলায় প্রতি আক্রমণ করতেই হবে। সংঘর্ষে যেতেই হবে। অসাম্য ভাঙতে সংঘর্ষ ও সাম্য আনতে নির্মাণ জরুরি।

 বিভিন্ন ভাষাগোষ্ঠী বা সাংস্কৃতিক গোষ্ঠীকে নিয়ে এক একটি পৃথক উন্নততর সাম্যের সমাজ গড়ার পরিকল্পনা নিলে তা হবে বাস্তবসম্মত। যেমন ওড়িয়াভাষী অঞ্চল বাংলাভাষী অঞ্চল (যার মধ্যে থাকবে পশ্চিমবাংলা, বিহারের বাংলাভাষী অঞ্চল, অসম ও ত্রিপুরার বাংলাভাষী অঞ্চল এবং বাংলাদেশ), ঝাড়খণ্ডের আদিবাসী সংস্কৃতি প্রভাবিত অঞ্চল, বিহার, অন্ধ্র, ছত্তিশগড়, পূর্ব ভারতের সাতটি প্রদেশ—প্রত্যেকেই পৃথক দেশ হলে অসুবিধা কোথায়? কোথাও নেই। ইউরোপের ছোট ছোট দেশগুলো যদি স্বাধীন দেশ হয়ে মাথা উঁচু করে বাঁচতে পারে, তবে বাংলা, বিহার, ওড়িশা, অসম, ত্রিপুরা কেন পারবে না? নিশ্চয়ই পারবে। তাত্ত্বিক ভাবে পারবে। বাস্তবেও পারবে।

 যাঁরা সাম্যের সমাজ গড়ায় নেতৃত্ব দেবেন, তাঁদের নিজেদের যোগ্য করে গড়ে তুলতে হবে। শোষিত জনগণের মধ্যে যদি কাজ করতে চান, তবে তাদের পাশে বন্ধুর মতো দাঁড়াতে হবে। পরিবারের একজন হতে হবে। তাদের ভালোবাসা,