বিষয়বস্তুতে চলুন

পাতা:অলৌকিক নয় লৌকিক (প্রথম খণ্ড) - প্রবীর ঘোষ.pdf/২০৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।
২০৬
অলৌকিক নয় লৌকিক (প্রথম খণ্ড)

আপনাদের সামনে তুলে ধরছি। “প্রথমটিতে ৭ জন ও অপরটিতে ৯ জন মানুষ যদি একত্রে একটি করে আঙুল ছুঁয়ে চিৎকার করে বলে, ‘কামার আলিশা দরবেশ..’ তাহলে পাথর দুটি আপনা থেকেই শূন্যে ভেসে ওঠে। পাথর শূন্যে ভেসে থাকে আঙুলগুলি স্পর্শ করে; কিন্তু আঙুলে বিন্দুমাত্র ওজন অনুভব হয় না। যতক্ষণ একটানা একশ্বাসে চিৎকার চলে, ততক্ষণ পাথর শূন্যে ভাসে। যার কণ্ঠ আগে বন্ধ হয় পাথর পাথর গড়িয়ে পড়ে তারই দিকে। কেউ একজন চিৎকার না করে তাহলে পাথরটি সামান্য একটু ওপরে উঠে নীচে আছড়ে পড়ে।’

 “সব থেকে আশ্চর্য ব্যাপার, কামার আলিশা দরবেশের নাম ছাড়া অন্য কোন নামে বা শব্দে পাথর দুটির একটিও শূন্যে ভাসে না।”

 যদিও প্রতিবেদক জানিয়েছেন এমন অলৌকিক ঘটনা, যার ব্যাখ্যা বিজ্ঞান দিতে সক্ষম হয়নি। তবু বিজ্ঞানেরই সামান্য সাহায্য নিয়ে ও যুক্তি দিয়ে ঘটনার ব্যাখ্যা করছি এবং সেই সঙ্গে এও জানিয়ে রাখি, কলকাতার বুকেই যুক্তিবাদে বিশ্বাসী, বিজ্ঞানমনস্করাই বেশ কয়েকবার কম বেশি ওই ওজনের পাথর একই পদ্ধতিতে আঙুল ঠেকিয়ে শূন্যে ভাসিয়েছেন। না, তাঁরা পাথর ভাসাবার জন্য কোনও পির বা সাধু-সন্ন্যাসীর নাম উচ্চারণ করেননি।

 প্রাথমিকভাবে পরিবর্তনের খবর আমাকে যথেষ্ট আকর্ষণ করেছিল। যদিও বুঝেছিলাম ৯০ কেজি পাথর ৯ জনের হাতের ছোঁয়ায় উঠে থাকলে বিজ্ঞানের সাধারণ নিয়ম অনুসারে এক একজনকে তুলতে হয়েছিল কম-বেশি ১০ কেজি ওজন। আর দ্রুত একশ্বাসে দরবেশের নাম একসঙ্গে চিৎকার করে উচ্চারণ করার মধ্যে তৈরি হচ্ছিল Impulsive force (ইম্পালসিভ ফোর্স)। শ্রমিকেরা ভারি কিছু তোলার সময় ‘আউর ঘোড়া’, ‘হেঁইয়ো’, ‘মারো জওয়ান হেঁইয়ো’ ইত্যাদি বলতে থাকে এ নিশ্চয়ই আপনারা প্রায় সকলেই দেখেছেন। ‘হেঁইয়ো’ কথাটা সব শ্রমিককে একই সঙ্গে ইম্পালসিভ ফোর্স তৈরি করতে সাহায্য করে। অর্থাৎ সব শ্রমিক একই সময়ে স্থিরভাবে বল (force) প্রয়োগ না করে ‘এক ঝটকায় বল’ (Impulsive force) প্রয়োগ করে। ঝটকা দিয়ে শক্তি প্রয়োগের মাধ্যমে যে ফল পাওয়া যায় যা স্থিরভাবে শক্তি প্রয়োগের চেয়ে বেশ কয়েকগুণ বেশি। ফলে বিজ্ঞানের নিয়মমাফিক বাস্তবক্ষেত্রে এক হ্যাঁচকাটানে ১০ কেজি তুলতে এক একজন ভক্তকে ২ থেকে ২ ১/২ কেজি ওজন সাধারণভাবে তোলার মতো শক্তি নিয়োগ করতে হয়।


 সময় ১৯৮০-র ডিসেম্বর ইলোরা থেকে গোয়া যাওয়ার পথে পুণে নেমেছিলাম প্রধানত কামার আলিশা দরবেশ-এর দরগা দেখতে। পুনে থেকে ২০ কিলোমিটার মতো দূরে ব্যাঙ্গালোর রোডের ওপর শিবাপুর স্টপেজে নেমে দরগায় যেতে হয়। একটা ছোট পাহাড়ের ওপর দরগা।