পরীক্ষার জন্য চেষ্টা চালানো হয়েছিল। একটি সৎ, যুক্তিবাদী ও বিজ্ঞানমনস্ক পত্রিকা হিসেবে গেলারের প্রচারের গড্ডলিকা প্রবাহে নিজেকে ভাসিয়ে দিয়ে জনসাধারণের মানসিক দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে পত্রিকার বিক্রি বাড়াতে চায়নি। আবার, ‘গেলারের অতীন্দ্রিয় স্রেফ বুজরুকি’, শুধু এ কথাটা বলেই ব্যাপারটা উড়িয়েও দিতে চায়নি। পত্রিকাটির তরফ থেকে যোগাযোগ করা হয়েছিল ইউরির সঙ্গে। এই ধরনের পরীক্ষায় সহযোগিতা করতে রাজি হলেন ইউরি। পরীক্ষার দিন স্থান সবই ঠিক হয়ে গেল। পরীক্ষার দিন ইউরি এলেন না। বললেন, “আমি বিজ্ঞানীদের সামনে বহু কঠিন পরীক্ষায় সফল হয়েছি। নতুন করে পরীক্ষায় নামার কোনও যুক্তি খুঁজে পাচ্ছি না।” ‘নিউ সায়েণ্টিস্ট’ পত্রিকার কর্তৃপক্ষ কিন্তু আশা ছাড়লেন না। বহু কাঠখড় পুড়িয়ে এবার ইউরি গেলারকে পরীক্ষায় হাজির হতে রাজি করালেন। কিন্তু এবারেও এলেন না ইউরি। পরিবর্তে জানালেন, তিনি একটা ভয় দেখানো চিঠি পেয়েছেন, যাতে বলা হয়েছে, এই পরীক্ষায় অংশ নিলে ইউরিকে খতম করা হবে। তাই বাধ্য হয়েই তিনি মত পরিবর্তন করেছেন।
এক ঝলকে ইউরি
ইউরি গেলারের এই ক্ষমতার উৎস হিসেবে ডঃ পুহারিক যে গল্প তাঁর বিখ্যাত ‘ইউরি’ বইটিতে লিখেছেন। তাতে বলা হয়েছে— ইউরির বয়েস যখন তিন বছর সেই সময় চকচকে মুখের একটা অদ্ভুত মূর্তি এসে হাজির হয় ইউরির মুখোমুখি। মূর্তিটার মাথা থেকে একটা তীব্র রশ্মি এসে পড়ে ইউরির মাথায়। ইউরি জ্ঞান হারান। তারপর থেকেই ইউরি নানা-রকম অতীন্দ্রিয় ক্ষমতার অধিকারী হয়ে ওঠেন। ওই অদ্ভুত মূর্তি না কি অন্য কোন মহাকাশের অধিবাসী।
ইউরি গেলার তাঁর নিজের আত্মজীবনী ‘মাই স্টোরি’-তে অতীন্দ্রিয় ক্ষমতা পাওয়ার যে গল্প বলেছেন, তা কিন্তু পুহারিকের গল্পের সঙ্গে মেলে না। ‘মাই স্টোরি’-তে আছে ওর সামনে এসে হাজির হয়েছিল বাটির মতো একটি বস্তু। তারই আলোয় চোখ ধাঁধিয়ে গিয়েছিল, সেই সঙ্গে অনুভব করেছিলেন একটা ধাক্কা। ইউরিও অবশ্য বলেছেন, তাঁর এই অতীন্দ্রিয় ক্ষমতা পেয়েছেন অন্য গ্রহবাসীর কাছ থেকে।
ডক্টর অ্যানড্রিজা পুহারিকের সঙ্গে ইউরির প্রথম সাক্ষাৎ ১৯৭১-এ এক নাচগানের আসরে। নানা ধরনের নাচগানের পর ছিল ইউরির ম্যাজিক। ইউরি তখন পঁচিশ বছরের ঝক্ঝকে তরুণ। ইউরির কথা বার্তা শো-ম্যানশিপে মুগ্ধ হলেন পুহারিক। তারপরই ঘটে গেল ইউরি গেলার ও কোটিপতি বিজ্ঞানী অ্যানড্রিজা পুহারিকের মণিকাঞ্চন যোগ। পুহারিকের অর্থ, প্রচার ও বৈজ্ঞানিক আবিষ্কার ইউরিকে রাতারাতি প্রতিষ্ঠিত করল অতীন্দ্রিয় ক্ষমতাবান হিসেবে।