পাতা:অলৌকিক নয় লৌকিক (প্রথম খণ্ড) - প্রবীর ঘোষ.pdf/২৭১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
২৭৪
অলৌকিক নয় লৌকিক (প্রথম খণ্ড)

বেঁচে থাকা মানুষের শারীরবৃত্তিতে অসম্ভব ব্যাপার। যখন কৌশলে নাড়ির স্পন্দন বন্ধ করেছি তখন তা দেখে ভয়ংকর রকম অবাক হয়েছেন ডাঃ আবিরলাল মুখার্জি, ডাঃ প্রসেনজিৎ কোনার, ডাঃ ধীরেন্দ্রনাথ গঙ্গোপাধ্যায়, ডাঃ জ্ঞানব্রত শীল প্রমুখ বহু বিশিষ্ট চিকিৎসক।

 সাধারণ মানুষদের মধ্যে একটা ধাক্কা দিতে-ই একসময় থেকে নাড়ি বন্ধ করার আগে মুনি-ঋষিদের যোগে নাড়ি বন্ধের গল্প বলা শুরু করি। দেখলাম, মানুষ হতবাক হয়ে দেখেছে নাড়ি বন্ধের ঘটনা।

 আমরা একদিকে অলৌকিকত্বের বিরুদ্ধে প্রচার করেছি, আর একদিকে মুনি-ঋষিদের যোগ বিষয়ে ‘মিথ’ ভেঙেছি।

জলের তলায় বারো ঘণ্টা

 ১৯৮৩ সালের ২৪জুন ‘সত্যযুগ’ পত্রিকা এবং ২৫ জুন যুগান্তর পত্রিকা একটা দারুণ চাঞ্চল্যকর খবর ছাপল—জলের তলায় বারো ঘণ্টা। খবরের বিবরণে জানা গেল কৃষ্ণনগর ষষ্ঠীতলার ২১ বছরের তরুণ প্রদীপ রায় কোনও যান্ত্রিক সাহায্য ছাড়া জলের তলায় একনাগাড়ে বারো ঘণ্টা থাকতে পারে। অবশ্যই একটা বিশ্ব রেকর্ড, কারণ জলের তলায় থাকার আগেকার বিশ্ব রেকর্ড ক্যালিফোর্নিয়ার রবার্ট ফস্টারের। তিনি কোনও কিছু যান্ত্রিক সাহায্য ছাড়া ১৩ মিনিট ১৫ সেকেণ্ডের মতো জলের তলায় ছিলেন।

 প্রদীপ রায় জানিয়েছিলেন— বছর সাতেক আগে আগরতলায় দাদার কাছে থাকার সময় জলে ঝাঁপাতে গিয়ে বুকে আঘাত পান। তারপর থেকেই তাঁর এই অলৌকিক ক্ষমতা এসে গেছে। মাছের মতোই জলের তলায় থাকতে আর অসুবিধে হয় না।

 প্রদীপ রায় পশ্চিমবঙ্গের ক্রীড়ামন্ত্রী সুভাষ চক্রবর্তীর সঙ্গে দেখা করে তাঁকে দেখালেন নিজের অলৌকিক ক্ষমতার সপক্ষে একগাদা সার্টিফিকেট, এগুলো নাকি দিয়েছেন পশ্চিম দিনাজপুরের জেলাশাসক, কাটোয়ার মহকুমা শাসক এবং আরও অনেক হোমরা-চোমরা।

 সমস্ত ঘটনা শুনে এবং নথিপত্র দেখে সুভাষ চক্রবর্তী ঠিক করলেন প্রদীপ রায়ের অলৌকিক ক্ষমতার পরীক্ষা নেবেন। পরীক্ষার দিন ঠিক হলো ১৬ জুলাই। ১৬ জুলাই সরকারি পরীক্ষকদের চোখকে যাতে প্রদীপবাবু ফাঁকি না দিতে পারেন, তার জন্যে এই পরীক্ষা ব্যবস্থাকে সহযোগিতা করার জন্য বেসরকারিভাবে নিজের ব্যক্তিগত উদ্যোগে আমি প্রস্তুত হই। আমাকে সহযোগিতার করার জন্যে আমার দুই বন্ধুকেও তৈরি রাখি। কিন্তু শেষ পর্যন্ত প্রদীপ রায় ১৬ জুলাই-এর পরীক্ষায় হাজির হননি। পরিবর্তে ১৫ জুলাই প্রদীপবাবুর পক্ষ থেকে জানানো হয় ১৬ জুলাই প্রদীপ রায়ের জন্মদিন, অতএব সেই দিনের পরীক্ষায় হাজির হওয়া তাঁর পক্ষে সম্ভব নয়।