“সে লিখে দেব। আর হ্যাঁ, আমার নাম জানতে চাইছেন না? রূপরাজ। রূপরাজ ঘােষ। ঠিক আছে আর আপনাকে বিরক্ত করব না। রবিবারই দেখা হবে।”
এই মুহূর্তে আমার মাথায় যে চিন্তাটা ঢুকল তা হলাে, রূপরাজের অক্সিজেন গ্রহণের কৌশলটা কী হতে পারে? অক্সিজেন ছাড়া যােগের সাহায্যে বেঁচে থাকা গল্প-গাছাতেই সম্ভব, বাস্তবে নয়। অতএব?
রূপরাজকে অনুরােধ করলাম, “কিছু মনে না করলে আমাদের সামনে অক্সিজেন ছাড়া দশ মিনিট থেকে দেখাবেন?”
রূপরাজ জিজ্ঞেস করলেন, “পরীক্ষা করবেন কেমন করে?”
“কেন, স্রেফ আপনার নাক-মুখ টিপে রেখে।”
রূপরাজ সােফায় বসলেন। আমি ওর নাক-মুখ আমার হাতের তালু ও আঙুলের সাহায্যে চাপা দিলাম। দেওয়ালের ব্যাটারিচালিত ঘড়ির লাল সেকেণ্ডের কাঁটা ঘুরতে শুরু করল এক-দুই-দশ-কুড়ি...তিরিশ...পঞ্চাশ..ষাট...। না, আমার উৎকণ্ঠাকে ভেঙে গুঁড়িয়ে দিলেন রূপরাজ। দমবন্ধ ইঁদুরের মতাে বারকয়েক হাঁস-ফাঁস করে এক ঝটকায় আমার হাত সরিয়ে দিলেন।
“সে কি রূপরাজবাবু; চব্বিশ ঘণ্টার কথা বলে মাত্র এক মিনিটেই মাত হয়ে গেলেন? এই ক্ষমতা নিয়ে আপনি আমার চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করতে এসেছিলেন।”
রূপরাজ মুহূর্তের জন্য কিছুটা বিভ্রান্ত ছিলেন। সেটা কাটিয়ে উঠে বললেন, “ঠিক আছে আমি পারিনি হেরে গেছি, আপনার চ্যালেঞ্জ আর গ্রহণ করতে আসছি না, হলাে তাে?”
“হলাে আর কোথায়? এই কথাগুলােই যে আপনাকে লিখে দিতে হবে ভাই। নতুবা আবার কোথায় গিয়ে যে আপনি প্রতারণা করবেন তার ঠিক কি?”
“ক্ষমা তাে চেয়ে নিয়েছি। পরাজয় মেনে নিয়েছি। আবার কি, আপনার অনেক দামি সময়ের কিছুটা নষ্ট করলাম বলে দুঃখিত।” উঠে দাঁড়ালেন রূপরাজ। “দরজাটা খুলে দিন।”
“না লিখে দিলে তাে আপনাকে ছাড়ছি না।”
ঘরের মধ্যে খাঁচাবন্দী বাঘের মতাে পায়চারি করতে করতে রূপরাজ বললেন, ‘বেশ তাে, ধরে রেখে দিন যতক্ষণ খুশি যতদিন খুশি।”
“আপনি আমার সহজ সরলশর্তে রাজি না হলে কিন্তু আখেরে আপনাকেই পস্তাতে হবে। আপনার বিরুদ্ধে পুলিশের কাছে প্রতারণার অভিযােগ আনতে বাধ্য হব।”
“অভিযােগ শেষ পর্যন্ত প্রমাণ করতে পারবেন তাে?” রূপরাজ-এর কথায় ব্যঙ্গের সুর।
অতি বিনয়ের সঙ্গে বললাম, “তা পারব বই কি। আপনাদের মতাে বিখ্যাতদের সঙ্গে সাক্ষাতের বিশেষ মুহূর্তগুলাে ধরে রাখার জন্য আধুনিক বিজ্ঞানের সাহায্য নিতে হয়েছে। এই যে আপনি এলেন, কথা বললেন, এ-সবই ক্যামেরা ও টেপে বন্দি করে রেখেছি।”