বিষয়বস্তুতে চলুন

পাতা:অলৌকিক নয় লৌকিক (প্রথম খণ্ড) - প্রবীর ঘোষ.pdf/২৮৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।
ভাববাদ বনাম যুক্তিবাদ বা বস্তুবাদ
২৮৭

বিভিন্ন ধর্মে আত্মার সম্বন্ধে বিভিন্ন রকমের বিশ্বাস রয়েছে। প্রত্যেক ধর্মের ধারণার মধ্যে বিভিন্নতা থাকলেও প্রত্যেক ধর্মই কিন্তু আত্মা বিষয়ে তাদের ধারণাকেই | একমাত্র সত্য বলে মনে করে।

মানুষের মৃত্যুর পর বিদেহী আত্মার কী পরিণতি হয়, তা নিয়েও বিভিন্ন ধর্মের বিশ্বাস বিভিন্ন ধরনের।

হিন্দু ধর্মে বিশ্বাসীরা মনে করে ‘আত্মা’ ও ‘প্রাণ’ এক নয়। আত্মা’ হলাে মন। মৃত্যুর সঙ্গে সঙ্গে প্রাণ শেষ হয়ে যায়। আত্মা বা মন শেষ হয় না। আত্মা ‘অজ’ অর্থাৎ জন্মহীন, নিত্য, শাশ্বত।

প্রাচীন আর্য বা হিন্দুরা একটি মাত্র স্বর্গে বিশ্বাসী ছিলেন। এই স্বর্গের নাম ছিল ব্রহ্মলােক অর্থাৎ প্রজাপতি ব্রহ্মার রাজ্য। প্রাচীন হিন্দুরা বিশ্বাস করতেন, মৃত্যুর পর আত্মা ব্রহ্মলােকে যায়। পরবর্তীকালে হিন্দুধর্মে এলাে কর্মফল। বলা হলাে, যারা ইহলােকে ভাল কাজ করবে, তারা তাদের ভালাে কর্মফল শেষ না হওয়া পর্যন্ত ব্রহ্মলােকে থাকবে। তারপর আবার ফিরে এসে জন্ম নেবে পৃথিবীতে পূর্বজন্মের কর্মফল অনুসারে। তারা বিশ্বাস করতেন, চন্দ্রলােকেই পিতৃপুরুষদের আত্মারা থাকে। চাঁদ থেকেই প্রাণের বীজ ঝরে পড়ে পৃথিবীর বুকে।

হিন্দরা গােড়ার দিকে নরক বিশ্বাস করতেন না। পরে, ভয়ের দ্বারা গােষ্ঠীজীবনের পক্ষে প্রয়ােজনীয় কিছু নীতি মেনে চলতে বাধ্য করার জন্য সৃষ্টি হলাে নরকের।

প্রাচীন যুগের শােষক ক্ষত্রিয় ও ব্রাহ্মণ সমাজ অর্থাৎ শাসক ও পুরােহিত সম্প্রদায় শােষণ ও ঐশ্বর্যভােগের লালসায় জন্মান্তরবাদের সঙ্গে যুক্ত করল কর্মফলকে। কৃষক ও দাস সম্প্রদায়কে জন্মান্তর ও কর্মফলের আফিং খাইয়ে প্রতিবাদহীন করে রাখা হলাে। প্রতিটি অত্যাচার, অন্যায় ও দারিদ্র্যতাকে আগের জন্মের কর্মফল হিসেবে একবার বিশ্বাস করাতে পারলে আর পায় কে?

বর্ণাশ্রম সৃষ্টি করে ধর্মের নামে বলা বলাে, আপনি এই জন্মে সভাবে নিজস্ব কাজ করুন, মৃত্যুর পর এবং পরজন্মে এর ফল পাবেন। আপনি শূদ্র? আপনার নিজস্ব কাজ উচ্চ-সম্প্রদায়ের সেবা করা।

ভারতবর্ষে দাস প্রথা ছিল, কিন্তু কর্মফলের আফিং-এর নেশায় দাস বিদ্রোহ হয়নি।

ভারতের প্রাচীন আয়ুর্বেদে বলা আছে—মৃত্যুর পর মানুষ পঞ্চভূতে বিলীন হয়। মৃত্যুতেই সব শেষ। আয়ুর্বেদের এই মতকে