বিষয়বস্তুতে চলুন

পাতা:অলৌকিক নয় লৌকিক (প্রথম খণ্ড) - প্রবীর ঘোষ.pdf/২৮৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।
২৮৯
অলৌকিক নয় লৌকিক (প্রথম খণ্ড)
২৮৯

________________

ভাববাদ বনাম যুক্তিবাদ বা বস্তুবাদ ২৮৯ বিভিন্ন ধর্মাবলম্বীরা নিজেদের ধারণা-ই একমাত্র ঠিক’ বলে আঁকড়ে ধরে বসে রয়েছেন। আত্মা নিয়ে নিজের ধর্ম ছাড়া অন্য ধর্মের ধারণা যে ভুল, তা প্রমাণ করতেও প্রত্যেকে যথেষ্ট সচেতন। আত্মা নিয়ে নানা ধর্মমতের নানা রকমের ধারণার ঠেলায় ও নিজেদের ধর্মের ধারণাটাই সত্য বলে জাহির করার গুঁতােগুতিতে পরামননাবিজ্ঞানীরা বেশ কিছুটা অস্বস্তিকর অবস্থায় রয়েছেন। কারণ, হিন্দু আধ্যাত্মিক ধর্মচেতনাকে পুঁজি করে পরাবিদ্যা বিদেহী আত্মাকে প্ল্যানচেটে নিয়ে আসার ভেল্কি দেখায়। সেইসঙ্গে ভেসে যায় পুনর্জন্মের গােটা তত্ত্বটাই। আমাদের ভারতের পরামনােবিজ্ঞানীদের মধ্যে ডঃ হেমেন্দ্রনাথ বন্দোপাধ্যায়ের নাম-ডাকই সম্ভবত সবচেয়ে বেশি। ডঃ বন্দোপাধ্যায়ের কথায়, “বিজ্ঞান সাধনা ও আধ্যাত্মিক ধর্মচেতনার যে সহজাত সংঘাত ধারাবাহিক কাল থেকে চলে আসছে তারই যােগসূত্র বা মিলনের সেতুবন্ধ সন্ধানে পরামনােবিদ্যার বিভিন্ন গবেষণার উৎপত্তি। বিজ্ঞান ও অধ্যাত্মবাদের এই মৌলিক ব্যুৎপত্তিগত সংঘাতে ফলশ্রুতি হিসেবে কিছু চিন্তাশীল ব্যক্তি ধর্মতত্ত্বের বিজ্ঞানগ্রাহ্য ব্যাখ্যার খোঁজে অনুশীলন করেছন।” (যুগান্তর ১০.৩.১৯৫৮)। ওই একই প্রবন্ধে ডাঃ বন্দ্যোপাধ্যায় আরও বলেছেন, বিশ্বব্রহ্মাণ্ডে আধ্যাত্মিক শক্তি আছে কি নেই এই মূল প্রশ্নের ওপরই ধর্মের স্থায়িত্ব নির্ভরশীল।” ঈশ্বরবিদ্যা বা Theosophy বিভিন্ন ধর্মের বিভিন্ন প্রকারের অন্ধবিশ্বাসের ওপর দাঁড়িয়ে রয়েছে। ধর্মের সঙ্গে অলৌকিক বিশ্বাস পুরােপুরি জড়িয়ে রয়েছে। ধর্মগ্রন্থগুলাের সত্য বৈজ্ঞানিক সত্যের সঙ্গে সম্পর্কহীন। ঈশ্বরবিদ্যা এক ধরনের সামাজিক চেতনা বা বিশ্বাস। এই চেতনা বা বিশ্বাসের স্রষ্টা মানুষ স্বয়ং। অর্থাৎ, সােজা কথায়—ঈশ্বর মানুষেরই সৃষ্টি। ঈশ্বর কোনও দিনই মানুষকে সৃষ্টি করেনি। ডাঃ হেমেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায় ধর্মতত্ত্বের বিজ্ঞানগ্রাহ্য ব্যাখার খোঁজ কতখানি পেয়েছেন জানি না। তবে আজ পর্যন্ত তিনি যে-সব ব্যাখ্যা হাজির করেছেন তার কোনটিই বিজ্ঞানগ্রাহ্য হয়নি। আত্মার বাস্তব অস্তিত্ব থাকলে তার উৎপত্তি, উপাদান, গঠন বা চেহারা এবং মৃত্যুর পর বিদেহী আত্মার কী হয় এই মূল বিষয়গুলাে নিয়ে আত্মার বিশ্বাসী ধর্মগুরুরা নিশ্চয়ই একই মত পােষণ করতেন, আত্মার ব্যাখ্যায় ধর্মে-ধর্মে এমন বারাে রাজপুতের তেরাে হাঁড়ির’ হাল হতাে না। কার বিশ্বাস ছেড়ে আপনি কার বিশ্বাস মানবেন? শ্রীবন্দ্যোপাধ্যায়ের মতাে পরামনােবিজ্ঞানীরা অবশ্য জাতিস্মর তত্ত্বকে প্রতিষ্ঠা করার তাগিদে হিন্দু ধর্মতত্ত্বকেই মেনে নেবেন, কারণ, প্রধান ধর্মগুলাের মধ্যে একমাত্র হিন্দুধর্মই পুনর্জন্মে বিশ্বাস করে। অতএব অন্য সব অলৌকিক নয়, লৌকিক (প্রথম খণ্ড)-১৯