________________
ভাববাদ বনাম যুক্তিবাদ বা বস্তুবাদ ৩০১ স্বামী অভেদানন্দ কি বলতে চান, বিজ্ঞানমনস্ক চিন্তা ও যুক্তিকে বিসর্জন দিয়ে তাঁর কথাকেই অন্ধ বিশ্বাসে পরম সত্য বলে মেনে নেওয়াটাই বিজ্ঞতার লক্ষণ? স্বামী বিবেকানন্দের চোখে আত্মা স্বামী বিবেকানন্দ বলছেন, “আত্মা নামক একটি সত্য বস্তু আছে এবং তা দেহ থেকে ভিন্ন ও অমর।” (বিবেকানন্দ রচনা সমগ্র অখণ্ড বাংলা সংস্করণ-প্রকাশক নবপত্র। পৃষ্ঠা-২৫৪) চৈতন্য, আত্মা ও ঈশ্বর প্রসঙ্গে স্বামী বিবেকানন্দ আরও বলেছেন, “কিন্তু ঈশ্বর চৈতন্য-স্বরূপ। তাই প্রকৃত ভাব ও বিশ্বাস নিয়েই ঈশ্বরের উপাসনা করতে হবে। এখন প্রশ্ন হলাে চৈতন্য কোথায় থাকেন? গাছে? মেঘে? না, অন্য কোথাও ? ‘আমাদের ঈশ্বর'—এই কথার অর্থই বা কি? এর উত্তর—“আপনিই চৈতন্য। এই মৌলিক বিশ্বাসটিকে কখনই ত্যাগ করবেন না। আমি চৈতন্যস্বরূপ। আর এই বিশ্বাসই হলাে যােগের সমস্ত কৌশল। এবং ধ্যান-প্রণালী হলাে—আত্মার মধ্যে ঈশ্বরকে উপলব্ধি করার উপায়।” (ঐ বইয়ে, পৃষ্ঠা-৫৩৫) স্বামী বিবেকানন্দ বলেছেন, “কোন অণু-পরমাণুর দ্বারা গঠিত নয় বলে আত্মা অবিনশ্বর..আত্মা কোন রূপ উপাদানের সমবায়ে গঠিত নয়,” | (ঐ বইয়ে, পৃষ্ঠা ২৬২-২৬৩) স্বামী বিবেকানন্দের বিশ্বাসে বিশ্বাস স্থাপন করলে স্বামী অভেদানন্দসহ বিভিন্ন ধর্মমতের আত্মার রূপ ধারণ বা দেহ গঠন নিয়ে ধারণাটাই বাতিল করতে হয়। স্বামীবিবেকানন্দ আবার অভেদানন্দের মনই আত্মা’ কথাটাকে মানতে নারাজ। তাঁর কথায়, চৈতন্য বা চেতনাই আত্মা। চৈতন্য বা চেতনা মন থেকে পৃথক কিছু। মনের সূক্ষ্ম শরীর আছে। (ঐ বইয়ে, পৃষ্ঠা-১৬২) এখানেও দেখতে পাচ্ছি অভেদানন্দের সঙ্গে বিবেকানন্দের বিশ্বাসের লড়াই। অথচ দুজনেই নাকি আবার বেদান্তে বিশ্বাসী। পরীক্ষা পর্যবেক্ষণের মধ্যে দিয়ে বিজ্ঞান সিদ্ধান্তে এসেছে মন, চিন্তা, চৈতন্য ইত্যাদি যে নামেই ডাকি, এসবই মস্তিষ্ক স্নায়ুকোষের ক্রিয়া-বিক্রিয়ার ফল—সে বিষয়ে আগেই আলােচনা করেছি। এর আগে মন’ নিয়ে যে কথাটা বলা হয়নি সে-কথাটাই বলি। “মন জুড়ে রূপান্তরিত হয়, আবার জড়ও মনে রূপান্তরিত হয়, এটা শুধু কম্পনের তারতম্য। | “একটি ইস্পাতের পাত গড়ে, তাকে কম্পিত করতে পারে এ রকম একটা শক্তি এতে প্রয়ােগ কর। তারপর কী ঘটবে? যদি একটি অন্ধকার ঘরে এই পরীক্ষাটি করা হয়, তবে প্রথম তুমি শুনতে পাবে একটি শব্দ—একটি গুনগুন শব্দ। শক্তিপ্রবাহ বর্ধিত করাে, দেখবে ইস্পাতের পাতটি আলােকময় হয়ে উঠেছে। শক্তি আরও বাড়িয়ে দাও, ইস্পাতটি একেবারে অদৃশ্য হয়ে যাবে। ইস্পাতটি মনে রূপান্তরিত হয়ে গেছে।”