৩০৩ ভাববাদ বনাম যুক্তিবাদ বা বস্তুবাদ তারপর মনে, তারপর মস্তিষ্ক-কেন্দ্রে তৎপর বহির্যন্ত্র কর্ণে।” ১১০ পৃষ্ঠায় কালিকানন্দ স্বামী বলেছেন, মন ও বুদ্ধির সুক্ষ্ম শরীর আছে। গ্রন্থটির ১১৮ পৃষ্ঠায় লেখক আবার বলছেন, আত্মাই চিত্ত। অর্থাৎ মােদ্দা কথায় কালিকানন্দ স্বামীর মনে হয়েছে মন, বুদ্ধি, চিত্ত বা চেতনা সবই ভিন্ন ভিন্ন বস্তু এবং চিত্ত বা চেতনাই আত্মা। মন ও বুদ্ধির সূক্ষ্ম শরীরও রয়েছে। স্বামীজির এই অদ্ভুত বিশ্বাসের সঙ্গে বিজ্ঞানের সত্যের কোনও সম্পর্ক নেই। | শঙ্করাচার্যও চৈতন্য নামের লক্ষ্মণটি দেহাতিরিক্ত আত্মা বলে ঘােষণা করেছিলেন। আত্মার শান্তিতে শ্রাদ্ধ প্রাণীর জীবন্ত শরীরে অসংখ্য জটিল রাসায়নিক ক্রিয়া-বিক্রিয়ার ফলে যে শক্তির সৃষ্টি হয় সেই শক্তিই শরীরের প্রাণশক্তি, শরীরকে কর্মচঞ্চল রাখার শক্তি। মৃত্যু ঘটলে শরীরের রাসায়নিক ক্রিয়া-বিক্রিয়াগুলাে বন্ধ হয়ে যায়। বন্ধ হয় শক্তির সরবরাহ। মৃত্যু পুরােপুরি একটি জৈবিক প্রক্রিয়া। মৃত্যুর পর আত্মাকে ধরে নিয়ে যেতে যমদূতেরা হাজির হয় না। যদিও অনেক হিন্দুর মধ্যেই এই ধারণা রয়েছে যে যম আত্মার পূর্বজন্মের কর্মফল বিচার করে স্বর্গে বা নরকে পাঠায়। সেখানে আত্মা সুখ বা শাস্তি ভােগ করে। শাস্তির মধ্যে আছে। গরম তেলে ভাজা, দিয়ে কাটা ইত্যাদি। তাহলে, আত্মাকে ভাজা যায় না কাটা যায়
- না—হিন্দু বিশ্বাসের কী হবে?
বহু প্রাচীন যুগ থেকে একধরনের সুবিধাভােগীরা তাদের স্বার্থরক্ষার জন্য, প্রচার করেছিল—তুমি এই জন্মে ত্যাগ স্বীকার কর, রাজাকে মান্য কর, পুরােহিতকে শ্রদ্ধা কর—মৃত্যুর পর তােমার আত্মার স্থান হবে স্বর্গে। এর অন্যথায় পতিত হবে নরকে। নরক ভােগের পরে তােমার আত্মা পৃথিবীতে ফিরে এসে আবার জন্ম নেবে, ভােগ করবে পূর্বজন্মের কর্মফল। কিন্তু, আজ পর্যন্ত কেউই স্বর্গে মৃতের আত্মাকে সুখ ভােগ করতে দেখেনি, দেখেনি আত্মাকে নরকের যন্ত্রণা ভােগ করতে। হাজার হাজার বছর ধরে আত্মা, পূর্বজন্মের কর্মফল, স্বর্গ নরক এইসব নিয়ে যে ধারণার সৃষ্টি হয়েছে তা একান্তভাবেই বিশ্বাসের ব্যাপার মাত্র। বাস্তবে স্বর্গ, নরক এবং আত্মা কোনওটারই অস্তিত্ব প্রমাণিত হয়নি কারণ অস্তিত্ব নেই। | বিভিন্ন ধর্মে মানুষের মৃত্যুর পর তার অস্তিত্বহীন আত্মার তৃপ্তি, মুক্তি, পরলােক্যাত্রার পাথেয় দেওয়ার জন্যে রয়েছে বিভিন্ন ধরনের নিয়ম-কানুন ও সংস্কার। বিভিন্ন ধর্মীয় বিশ্বাস অনুসারে মৃতদেহকে জ্বালানাে হয়, কফিনে শুইয়ে কবর দেওয়া হয়, মৃতদেহকে বসিয়ে কবর দেওয়া হয়, খাল, নদী বা সমুদ্রের জলে ভাসিয়ে সলিল সমাধি দেওয়া হয়, এমনকি মৃতদেহকে গাছে ঝুলিয়ে রাখা হয়।