পাতা:অলৌকিক নয় লৌকিক (প্রথম খণ্ড) - প্রবীর ঘোষ.pdf/৩০২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।
৩০৫
অলৌকিক নয় লৌকিক (প্রথম খণ্ড)
৩০৫

ভাববাদ বনাম যুক্তিবাদ বা বস্তুবাদ আত্মার (?) সদগতি ও শান্তির জন্য পারলৌকিক কাজকর্মের পূর্ণ দায়িত্ব আমারই ওপর বর্তানাের কথা। | যেহেতু আত্মার কোনও বাস্তব অস্তিত্ব নেই, আত্মা শুধু অবাস্তব কল্পনা মাত্র, তাই লােকাচার, প্রচলিত সংস্কার ও চক্ষুলজ্জার কাছে নতজানু হবার কোনও ইচ্ছেই আমার ছিল না। বিনিময়ে মর্মান্তিক মূল্য দিতে হবে জেনেও মনে মনে উচ্চারণ করেছিলাম বীরসিংহের দুঃসাহসী বীর সন্তান বিদ্যাসাগরের কথা, “আমি দেশাচারের নিতান্ত দাস নহি, নিজের বা সমাজের মঙ্গলের নিমিত্ত যাহা উচিত বা আবশ্যক বােধ হইবে তাহা করিব; লােকের বা কুটুম্বের ভয়ে কদাচ সঙ্কুচিত হইব না।” | মা, বােন, কিছু আত্মীয় ও কিছু প্রতিবেশীর মতামতকে, কুসংস্কারকে মূল্য না দেওয়ায়, দেখেছি তাঁরা কেমনভাবে আমাকে ত্যাগ করেছেন, দেখেছি কুসংস্কারগ্রস্তদের শত্রুতা কত মিথ্যাচারে নামতে পারে, সেইসঙ্গে দেখেছি সমাজের বিভিন্ন মানুষের কাছ থেকে কেমনভাবে বর্ষিত হয় সমর্থন, অভিনন্দন ভালােবাসা ও শ্রদ্ধার অজস্র কুসুম। এতগুলাে মানুষের ভালােবাসা, এইতাে আমার জীবনের পাথেয়। আত্মা প্রসঙ্গে চার্বাক বা নােকায়ত দর্শন প্রাচীন বস্তুবাদী দর্শনটির নামটা নিয়ে একটু আলােচনা স্বল্প পরিসরে সেরে নিলে বােধহয় অনেকের কিছুটা কৌতূহলও মেটানাে যাবে এবং আত্মা প্রসঙ্গে যে দর্শনের মতামতের সঙ্গে পরিচিত করাতে চাইছি, তার বিষয়েও কিছু বলা হবে। | ‘চাবাক' কথাটি কোথা থেকে এলাে? অনেক দার্শনিকের মতে চারু-বাক, থেকে চার্বাক কথাটা এসেছে। মানুষের স্বাভাবিক ভােগ প্রবৃত্তির কথা মাথায় রেখে যে দর্শন চারু' বা সুন্দর কথার জাল বুনে ইহ জগতেই সব কিছুর শেষ, মৃত্যুর পরে অন্য কোন জগৎ বলে কিছুই নেই,' বলে মানুষের চিত্ত আকর্ষণ করেছে, সেই দর্শনই চারু-বাক্ বা চার্বাক দর্শন। অন্য মতে ‘চ’ (অর্থাৎ চর্বণ) করে যে—এই অর্থে চার্বাক্ শব্দটি ব্যবহৃত হয়েছে। এই ধরনের ব্যাখ্যা তারা বলতে চান—চর্ব-চোষ্য খানা-পিনার মধ্যেই জীবনের চরমতম সার্থকতা যে দর্শন খুঁজে পায় সেই দর্শনই চার্বাক দর্শন। ব্যাকরণ মানতে গেলে দুটো মতকেই বাতিল করতে হয়। চারু-বাক’, থেকে ‘চারুবাক’, অথবা চারবাক’ বা ‘চার্বাক-এর ‘ক’-এ হসন্ত বাত দেওয়া হয়েছে। আবার চর্ণ করে যে সে চার্বাক’-নয় চার্বাক, অর্থাৎ ব’-এ আ-কার হবে না। পালি সাহিত্যে বিষয়ে সুপণ্ডিত রসি ডেভিল্ডস্ (Rhys Dabinds)-এর ধারণায়—মহাভারতের এক কুচরিত্র রাক্ষস চার্বাক। এই নাম থেকেই পরবর্তী সময়ে ভাববাদীরা বস্তুবাদী দর্শনটির নাম রাখেন চার্বাক দর্শন। মহাভারত আছে—চার্বাক ছিল দুরাত্মা দুর্যোধনের বন্ধু আর এক দুরাত্মা। কুরুক্ষেত্র যুদ্ধ-বিজয়ী ধর্মরাজ যুধিষ্ঠিরকে ব্রাহ্মণ ছদ্মবেশধারী চার্বাক জ্ঞাতিঘাতী হিসেবে ধিক্কার জানিয়ে আত্মঘাতী অলৌকিক নয়, লৌকিক {প্রথম খণ্ড)- ২০