পাতা:অলৌকিক নয় লৌকিক (প্রথম খণ্ড) - প্রবীর ঘোষ.pdf/৩০৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।
৩০৬
অলৌকিক নয় লৌকিক (প্রথম খণ্ড)
৩০৬

৩০৬ অলৌকিক নয়, লৌকিক (প্রথম খণ্ড) হতে প্ররােচিত করেছিল। কিন্তু উপস্থিত ব্রাহ্মগণ তাদের অতীন্দ্রিয় ক্ষমতায় চার্বাক-এর আসল পরিচয় জেনে ফেলে যুধিষ্ঠিরকে রক্ষা করেন। প্রাচীন ভাববাদীরা বস্তুবাদী দর্শনটির প্রতি সাধারণ মানুষের অশ্রদ্ধা ও ঘৃণা সৃষ্টির জন্যই এমন এক ঘৃণ্য রাক্ষস চরিত্রের নামে দর্শনটির নাম রেখেছিলেন। | সে যুগের কিছু ভাববাদীরা চার্বাক বা লােকায়ত দর্শনকে দেবগুরু বৃহস্পতি প্রণীত বলে উল্লেখ করেছেন। পুরাণে আছে—অসুরদের পরাক্রমে বিধ্বস্ত দেবকুলকে রক্ষা করতে এক কৌশল অবলম্বন করলেন বৃহস্পতি। অসুরদের ধ্বংসের জন্য, অধঃপাতে নিয়ে যাওয়ার জন্য এই ভ্রান্ত-দর্শন রচনা করলেন। তারপর অসরের ছদ্মবেশে অসুরদের মধ্যে বস্তুবাদী দর্শনটি প্রচার করলেন। ফলে নীতিভ্রষ্ট, ভ্রান্ত অসুররা দেবতাদের কাছে পরাজিত হলাে। এখানেও দেখতে পাই—বস্তুবাদী দর্শনই অসুরদের ধ্বংসের কারণ হয়েছিল, প্রচারের মধ্য দিয়ে বস্তুবাদী দর্শনের প্রতি আতঙ্ক এবং বিদ্বেষ সৃষ্টির স্পষ্ট চেষ্টা। শঙ্করাচার্য প্রমুখ ভাববাদী দার্শনিকেরা বস্তুবাদী দর্শনটিকে ‘লােকায়ত’ নামে অবহিত করার কারণ হিসাবে জানিয়েছেন—দর্শনটি ইতর লােকের দর্শন, তাই ‘লােকায়ত দর্শন। এখানে ভাববাদী দার্শনিকদের লােকায়ত দর্শনের প্রতি অশ্রদ্ধা স্পষ্ট। অনেক পাঠক-পাঠিকাদের মনেই এ-চিন্তা নিশ্চয়ই উঁকি-ঝুঁকি দিচ্ছে—চার্বাক বা লােকায়ত দর্শনে কী এমন কথা বলা হয়েছে, যা অবহেলায় পাশে সরিয়ে দেওয়ার সাধ্য সে যুগের রথী-মহারথী দার্শনিকদের ছিল না। ফলে ভাববাদী রথী-মহারথীরা বস্তুবাদী দর্শনটিকে লক্ষ্য করে তীক্ষ্ম আক্রমণ হেনেছেন। এবং সাধারণ মানুষদের দর্শনটি থেকে দূরে সরিয়ে রাখতে নানাভাবে আতঙ্ক সৃষ্টির চেষ্টা করেছেন। | চার্বাক বা লােকায়ত দর্শনে আত্মার বিষয়ে এমন কিছু যুক্তির অবতারণা করা হয়েছিল যেগুলি ইতরজন বা সাধারণের কাছেও গ্রহণীয় হয়ে উঠেছিল। যুক্তিবাদী এই দর্শনে আত্মা বা চৈতন্যকে দেহধর্ম বলে বর্ণনা করা হয়েছে। আর এই বক্তব্যই ভাববাদী দার্শনিকদের কাছে চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছিল। বস্তুবাদী চার্বাক দর্শনের সুদীর্ঘ লড়াই চলেছিল শুধুমাত্র আত্মা ‘অমর’ কি মরণশীল’—এই নিয়ে। লােকায়ত দর্শন মতে কোন সিদ্ধান্তে পৌঁছানাের জন্য প্রমাণের প্রয়ােজন। একান্ত বিশ্বাস-নির্ভর অনুমানের সাহায্যে সিদ্ধান্ত পৌঁছানাে সম্ভব নয়। অনুমান-নির্ভর, একান্ত বিশ্বাস-নির্ভর অমর আত্মা, ইহলােক, পরলােক ইত্যাদি ধারণাগুলাে লােক ঠকানাের জন্য একদল ধূর্ত লােকের সৃষ্টি। | প্রমাণের মধ্যে প্রত্যক্ষ প্রমাণই শ্রেষ্ঠ বলে চার্বাক দর্শন মনে করলেও তারা প্রত্যক্ষ-অনুগামী জ্ঞানকেও মর্যাদা দিয়েছিলেন। অর্থাৎ অপ্রত্যক্ষ প্রমাণের ক্ষেত্রে প্রতিটি অনুমানের মূল শর্ত অবশ্যই হবে পূর্ব প্রত্যক্ষ অর্থাৎ প্রত্যক্ষের ওপর