পাতা:অলৌকিক নয় লৌকিক (প্রথম খণ্ড) - প্রবীর ঘোষ.pdf/৩৩৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।
৩৪১
অলৌকিক নয় লৌকিক (প্রথম খণ্ড)
৩৪১

________________

| প্ল্যানচেট (Planchetc) বা প্রেত বৈঠক। ৩৪১ শক্তি। রবীন্দ্রনাথের অশেষ আগ্রহে বসল প্লানচেট-চক্র, নভেম্বর ৪, ৫, ৬, ৮, ২৮ ও ২৯ এবং ১৬ ডিসেম্বর। প্ল্যানচেট-চক্রে মিডিয়াম বুলা ও রবীন্দ্রনাথ ছাড়া বিভিন্ন সময়ে অন্যান্যদের সঙ্গে ছিলেন অবনীন্দ্রনাথ, অলােকেন্দ্রনাথ, নন্দলাল বসু, ডঃ অমিয় চক্রবর্তী এবং প্রশান্ত মহলানবিশ। শেষবয়সে রবীন্দ্রনাথ উমাদেবী বা বুলাকে পেয়ে পরলােকের তথ্যানুসন্ধানে যথেষ্ট সচেষ্ট হয়েছিলেন। ৬, ২৮, ২৯ নভেম্বর এবং ১৬ ডিসেম্বর প্ল্যানচেটের পুরাে বিবরণ লিপিবদ্ধ করা রয়েছে ৪, ৫ ও ৮ নভেম্বরের প্ল্যানচেটের কিছু কিছু বিবরণ পাওয়া যায় রবীন্দ্রনাথের লেখা বিভিন্ন চিঠি-পত্র থেকে। | প্ল্যানচেট-চক্রগুলােতে উমাদেবীর ওপর বিদেহী আত্মার ভর হতেই উমাদেবী লিখতে শুরু করতেন। প্রায় সবসময়ই প্রশ্নকর্তা ছিলেন রবীন্দ্রনাথ। | উমাদেবীর কাছ থেকে বিদেহী আত্মাদের লিখিত উত্তর (?) পেয়েও রবীন্দ্রনাথ কিন্তু বিদেহী আত্মার আবির্ভাব বিষয়ে নিঃসংশয় ছিলেন না। উমাদেবীকে মিডিয়াম করার পর ৬ নভেম্বর, ১৯২৯ রানী মহলানবিশকে একটি চিঠি লেখেন। যাতে লিখেছিলেন, “উত্তরগুলাে শুনে মনে হয় যেন সে-ই (মণিলাল গঙ্গোপাধ্যায়ের বিদেহী আত্মা) কথা কইছে। কিন্তু এসব বিষয়ে খুব পাকা প্রমাণ পাওয়া যায় না। তার প্রধান কারণ মন তাে সম্পূর্ণ নির্বিকার। তার যা ধারণা হয়, সে ধারণার হেতু সবসময় বাইরে থাকে না, তার নিজের প্রকৃতির মধ্যেই থাকে।” | প্ল্যানচেট প্রসঙ্গে রবীন্দ্রনাথ মৈত্রেয়ী দেবীকে যা বলেছিলেন, তারই কিছু পাই মংপুতে রবীন্দ্রনাথ’ বইতে। রবীন্দ্রনাথ বলেছেন, “এই তাে (বুলা) কী রকম করে সব লিখত বল তাে? আশ্চর্য নয় তার ব্যাপারটা? ... ও (বুলা) কেন মিছে কথা বলবে? কী লাভ ওর এ ছলনা করে?” মনােবিজ্ঞান কিন্তু বলে—অপরের চোখে নিজেকে বিশিষ্ট করে তােলার তাগিদেও মানুষ ছলনার আশ্রয় নেয়, মিথ্যাচারী হয়, বড়দের, বিখ্যাতদের মিথ্যাচার কী আমরা কোনও দিন দেখিনি? উমাদেবীর ক্ষেত্রে এমনটা হতে পারে, না-ও হতে পারে। উমাদেবী যদি ছলনার আশ্রয় না নিয়ে থাকেন, তবে মিডিয়াম হিসেবে তার হাত দিয়ে লেখাগুলাে কী করে এলাে? এই প্রশ্ন নিশ্চয়ই অনেকের মনে জাগতে পারে। এই বিষয়ে উত্তরও খুবই স্বচ্ছ এবং সরল, সম্মােহন ও স্ব-সম্মােহন নিয়ে যে আলােচনা আগে করেছি সেটুকু থেকেই নিশ্চয়ই বুঝতে পারছেন, উমাদেবীর ক্ষেত্রে বিদেহী আত্মার প্রতি অন্ধ-বিশ্বাস ও তীব্র অনুভূতিপ্রবণতা তাকে আংশিকভাবে সম্মােহিত করেছিল। বিদেহী আত্মা তার ওপরে ভর করেছে এই বিশ্বসের দ্বারা নিজেকেই নিজে সম্মােহিত করে উত্তর লিখে গেছেন। রবীন্দ্রনাথের ভাষায়, “খুব শক্ত সবল জোরাল মানুষ বােধহয় ভাল মিডিয়াম হয় না।” (মংপুতে রবীন্দ্রনাথ : মৈত্রেয়ী দেবী) একজন ভালাে মিডিয়াম হওয়া প্রসঙ্গে স্বামী অভেদানন্দ লিখছেন, “কোন