________________
৩৪৩ প্লানচেট (Planchette) বা প্রেত বৈঠক আমার দেখা প্ল্যানচেট বছর কয়েক আগের কথা। কলকাতার এক বিখ্যাত কলেজের বিজ্ঞান বিষয়ের এক অধ্যাপক বন্ধু একদিন কথায় কথায় বললেন, তিনি নিজেই কয়েকবার প্ল্যানচেটের সাহায্যে বিদেহী আত্মাকে এনেছেন। তার বাড়িতে এ-রকম একটি প্ল্যানচেট-চক্রে উপস্থিত থাকার জন্য আমাকে আমন্ত্রণ জানালেন। বন্ধুর আমন্ত্রণ উপেক্ষা না করে তার এক প্ল্যানচেট-চক্রে হাজির হলাম। সেদিনের ওই চক্রে অধ্যাপক বন্ধু সমেত আমরা পাঁচজন হাজির ছিলাম। খাওয়ার টেবিল ঘিরে পাঁচটা চেয়ারে বসলাম আমরা পাঁচজন। টেবিলের মাঝখানে রাখা হলাে একটা বড় সাদা কাগজ। কাগজটার ওপর বসানাে হলাে ছােট্ট তিনকোনা প্ল্যানচেট-টেবিল, এক কোনা থেকে আর এক কোনার দূরত্ব হবে ৬ ইঞ্চির মতাে। প্ল্যানচেট-টেবিলটার তিনটে পায়ার বদলে দুদিকে লাগানাে রয়েছে দু’টো লােহার গুলি বা বল-বেয়ারিং, একদিকে একটা বাের্ড-পিন, লােহার গুলি লাগানাের কারণ, টেবিলটা যাতে সামান্য ঠেলায় যে কোনও দিকে সাবলীল গতিতে যেতে পারে। সম্ভবত এককালে বাের্ড-পিনের জায়গাতেও একটা লােহার গুলিই ঢাকনা সমেত বসানাে ছিল, গুলিটা কোনও কারণে খসে পড়ায় বাের্ড-পিনটা তার প্রক্সি দিচ্ছে। যেদিকে বাের্ড-পিনের পায়া, সেদিকের টেবিলের কোণে রয়েছে একটা ছােট ফুটো। ওই ফুটোর ভেতরে খুঁজে দেওয়া হলাে একটা পেনসিল। পেনসিলের ডগাটা রইল কাগজ স্পর্শ করে। ঘরে ধুপ জ্বালা হলাে। আমাকে দর্শক হিসেবে রেখে চারজনে বসলেন বিদেহী আত্মার আহ্বানে। আমি আবেগপ্রবণ নই বলেই আমাকে মিডিয়ামের অনুপযুক্ত বলে রাখা হয়েছিল দর্শক হিসেবে। | আচার্য জগদীশচন্দ্র বসুর একটা ছবি এনে রাখা হলাে মিডিয়ামদের সামনে। মিডিয়ামরা ছবিটার দিকে তাকিয়ে একমনে চিন্তা করতে লাগলেন, সেইসঙ্গে প্রতেকের ডান হাতের তর্জনী ছুঁয়ে রইল, প্ল্যানচেটের টেবিল। কিছুক্ষণ পরে প্ল্যানচেটের টেবিলে নড়ে-চড়ে উঠল। অধ্যাপক বন্ধু জিজ্ঞেস করলেন, “আপনি কে?” উত্তরে বাংলায় লেখা হলাে—জগদীশচন্দ্র বসু। প্রশ্ন—পরলােকে উদ্ভিদের আত্মা আছে কি? উত্তর—না। প্রশ্ন—কেন যাননি? উৎসাহ নেই? উত্তর—আমি চলি। এবার যে ছবিটা হাজির করলাম, সেটা আমার মায়ের। ছবিটা টেবিলে রাখতে আমার অধ্যাপক বন্ধু বললেন, “ইনি কে?” —“আমার মা।”