—“নাম?”
—“সুহাসিনী ঘোষ।”
আবার প্ল্যানচেট-চক্র বসল। কিছুক্ষণ কেটে যেতেই পেনসিলটা গতি পেল। আমি প্রশ্ন করলাম, “আপনি কে?”
—“তোর মা।”
“নাম?”
“সুহাসিনী ঘোষ।”
“এখন কেমন আছ? ওখানে কষ্ট হয়?”
“না। এ দুঃখ-কষ্টের ঊর্ধ্বে এক জগৎ।”
“আমি দেহাতীত আত্মার অস্তিত্বে এতদিন অবিশ্বাস করে এসেছি। তুমি যে সত্যিই আবার মা, তার প্রমাণ কী?”
—“এখনি প্রমাণ করতে পারিস, তুই আমার ছেলে? আমি যাই।”
চক্র ভাঙতেই অধ্যাপক বন্ধুটি বললেন, “আমরা কোনও চাতুরির আশ্রয় নিয়েছিলাম বলে কি তোমার ধারণা?”
“না, লোক ঠাকানোর চেষ্টা তোমরা করনি ঠিক, কিন্তু, তোমাদের মধ্যে কারও একজনের চিন্তাশক্তির তীব্রতা তারই অজ্ঞাতে পেনসিলটাকে ঠেলে লেখাচ্ছিল,” বললাম, আমি।
বন্ধুটি কিছুটা উত্তেজিত হলেন, বললেন, “তুমি তো নিজেকে একজন র্যাশানালিস্ট বল। কোন যুক্তিতে এই লেখাগুলোকে আমাদেরই কারও অবচেতন মনের প্রতিফলন বলে স্থির সিদ্ধান্তে পৌঁছতে চাও তা একটু বলবে?”
আমি এবার মিহি সুরে আসল সত্যটি প্রকাশ করলাম, “ওই যে ছবিটি দেখছ, ওটি আমার মায়ের, নাম সুহাসিনী। কিন্তু তাঁর বিদেহী আত্মাকে টেনে আনতেই আমি নিশ্চিত হলাম, এই প্ল্যানচেটের পেছনে লোক ঠকানোর কোনও ব্যাপার না থাকলে, গোটাটাই ঘটছে অবচেতন মন থেকে। কারণ আমার মা জীবিত।”
আপনাদের অবগতির জন্য জানাই সেদিনের প্রেত-চক্রে উপস্থিত সকলেই প্ল্যানচেটের অস্তিত্বে বিশ্বাস হারিয়েছেন।
কয়েক মাস আগে আমার পরিচিত মিস্টার সিনহার (নামটা ঠিক মনে নেই) আহ্বানে তাঁরই এক বন্ধুর ভবানীপুরের বাড়িতে প্ল্যানচেটের আসরে গিয়েছিলাম। বরেণ্য সাহিত্যিক সন্তোষকুমার ঘোষের একটি ছবি মিডিয়ামদের সামনে রেখেছিলাম। আমি ছিলাম দর্শক। মিডিয়াম ছিলেন সিনহা ও তাঁর দুই বন্ধু। এখানেও একটা তিনকোনা প্ল্যানচেট-টেবিলকে একটা সাদা কাগজের ওপর চাপানো হয়েছিল। টেবিলের ফুটোয় গুঁজে দেওয়া হয়েছিল পেন্সিল।
কিছুক্ষণের মধ্যে পেনসিলটিকে চলতে দেখে প্রশ্ন করলাম, “আপনি কে?”
উত্তরে লেখা হলো, “সন্তোষ ঘোষ।”