প্রাণীই ঈশ্বরের দ্বারা সৃষ্ট হয়ে হঠাৎ করে পৃথিবীর বুকে আবির্ভূত হয়নি। হাজির হয়েছে কোটি কোটি বছরের দীর্ঘ বিবর্তনের মধ্য দিয়ে।
আধুনিক জীবাশ্ম বিজ্ঞানীদের মতে পৃথিবীতে জীবনের প্রথম বিকাশ ঘটে আজ থেকে প্রায় সাড়ে তিনশ’ কোটি বছর আগে অর্থাৎ, পৃথিবীর জন্মের একশ’ কোটি বছর পরে। জীব-বিজ্ঞানের ভাষায় তাদের বলা হয় ‘প্রোকারিয়টস’ (prokaryotes)—জীবাণুবিশেষ প্রাণী। তাদের ধরনধারণটা ছিল কতকটা আধুনিক ব্যাকটিরিয়ার মতো। এক একটি জীবকোষ এক একটি প্রাণী। এই জীবকোষে নিউক্লিয়াসের মতো সুস্পষ্ট কোনও অঙ্গ ছিল না। এই এককোষী প্রাণীই বিবর্তনের মধ্য দিয়ে ধীরে ধীরে বিকশিত হয়ে উঠল বহুকোষী প্রাণীতে। দীর্ঘ পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে সৃষ্টি হয়েছে বর্তমানের প্রতিটি শ্রেণীর প্রাণী এবং মানুষও তার বাইরে নয়।
প্রাণের উৎস চারটে জিনিস। এক: এক ধরনের কিছু প্রোটিন, যাকে বিজ্ঞানের পরিভাষায় বলা হয় ‘নিউক্লিয়োটাইড’ (Nucleotide)। দুই: কিছু অ্যাসিড, বিজ্ঞান যার নাম দিয়েছে ‘নিউক্লিক অ্যাসিড’ (Nucleic acid)। তিন: বিশেষ তাপমাত্রা, চার: বিশেষ পরিবেশগত চাপ। এই চারটি জিনিসের মিলনে সৃষ্টি হয়েছিল প্রাণ।
ডারউইন
পৃথিবীর জন্ম থেকেই নিউক্লিয়োটাইড ও নিউক্লিক অ্যাসিডের অস্তিত্ব পৃথিবীতে ছিল। বিভিন্ন সময় এরা মিলিতও হয়েছে, কিন্তু পরিবেশগত চাপ ও তাপের অভাবে প্রাণ সৃষ্টি হয়নি। পৃথিবী সৃষ্টির প্রায় একশো কোটি বছর পরে পৃথিবী একটা চরম অবস্থার মধ্যে ছিল। প্রতিনিয়ত প্রচণ্ড ঝড়, বৃষ্টি, বজ্রপাত, আগ্নেয়গিরির অগ্নৎপাত, ভুমিকম্পের ফলে অশান্ত পৃথিবীতে যে পরিবেশগত তাপ ও চাপ সৃষ্টি হয়েছিল, তারই মধ্যে হঠাৎ একসময় নিউক্লিয়োটাইড ও নিউক্লিক অ্যাসিড মিলিত হয়ে সৃষ্টি করেছিল প্রাণ।
প্রাণীদের ক্রমবিবর্তনের ইতিহাস প্রথম তুলে ধরেছিলেন চার্লস ডারউইন। দীর্ঘ বছরগুলোর অক্লান্ত পরিশ্রমে ডারউইন সৃষ্টি করলেন তাঁর সনাতন ধর্ম-বিরোধী সৃষ্টি ও বিবর্তন তত্ত্ব।
বিভিন্ন জীবাশ্মের আবিষ্কার ও তাদের প্রাচীনত্ব নির্ণয় করে বিজ্ঞান ডারউইনের বিবর্তন তত্ত্বের হারানো সুত্র বা ‘মিসিং লিংক’কে জোড়া লাগিয়ে সম্পূর্ণ রূপ দিল।
যদিও ডারউইন ছিলেন গত শতকের মানুষ, তবু তাঁকে ধর্মান্ধদের হাতে অত্যাচারিত হতে হয়েছে প্রায় মধ্যযুগীয় প্রথায়।