পাতা:অলৌকিক নয় লৌকিক (প্রথম খণ্ড) - প্রবীর ঘোষ.pdf/৪৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।
৪৬
অলৌকিক নয় লৌকিক (প্রথম খণ্ড)

 প্রাচীন অতীতে মানুষ দরিয়ায় নৌযান ভাসাতে শিখল। দিক নির্ণয়ের জন্য অনুভব করলো নক্ষত্র চেনার প্রয়োজনীয়তা। কেবলমাত্র অনুন্নত গণিত শাস্ত্রের উপর নির্ভর করে সীমিত জ্ঞান নিয়ে মানুষ গ্রহ, নক্ষত্রের বিষয়ে যা জেনেছিল তাতে অনেক ক্ষেত্রেই ছিল অসম্পূর্ণতা ও ভ্রান্ত ধারণা আর্যভট্ট, ভাস্কর, হিপার্কস-এর জ্যোতিষচর্চায় গণিত থাকলেও টেলিস্কোপের অভাবে পুরোপুরি বিজ্ঞান ছিল না। অর্থাৎ সেই সময়কার জ্যোতির্বিদ্যা বিজ্ঞানের পর্যায়ে উন্নত হতে পারেনি। বরাহমিহির থেকে টলেমির মত আকাশ পর্যবেক্ষকদের জন্যে তখন জ্যোতির্বিদ্যা (Astronomy) ও ফলিত জ্যোতিষ-এর (Astrology) মধ্যে স্পষ্ট পার্থক্য ছিল না।

 বিজ্ঞানের বিভিন্ন শাখার উন্নতির সঙ্গে সঙ্গে আবিষ্কৃত হলো দূরবীক্ষণ, উন্নত হলো গণিত শাস্ত্র। বহু পরীক্ষা-নিরীক্ষার মধ্য দিয়ে বিজ্ঞানরূপে প্রতিষ্ঠিত হলো বর্তমান জ্যোতির্বিদ্যা। পরিত্যক্ত হলো ফলিত জ্যোতিষ বা জ্যোতিষশাস্ত্ররূপে অ-বিজ্ঞান।

উন্নত দেশগুলোর সংখ্যাগুরু মানুষ আজ বুঝতে শিখেছেন,
মানুষের সুখ-দুঃখের হেতু আকাশের গ্রহগুলোর
মধ্যে নিহিত নেই, রয়েছে আমাদের
সৃষ্ট সমাজ ব্যবস্থার মধ্যে।

 বিশ্বের খ্যাতিমান ১৮৬ জন যুক্তিবাদী বিজ্ঞানী (এঁদের মধ্যে ১৮ জন নোবেল বিজয়ী) ১৯৭৫-এর সেপ্টেম্বরে নিউ ইয়র্কের ‘দি হিউম্যানিস্ট’ পত্রিকায় এক ইস্তাহারে বলেছিলেন, “আমরা অত্যন্ত বিচলিত, কারণ বিভিন্ন প্রচারমাধ্যম, নামী সংবাদপত্র, বিভিন্ন পত্র-পত্রিকা ও পুস্তক প্রকাশক পর্যন্ত ঠিকুজী-কোষ্ঠী, রাশিবিচার, ভবিষ্যদ্বাণীর পক্ষে ক্রমাগত প্রচার চালিয়ে যাচ্ছেন। যেখানে যুক্তি-বিচারের কোনও স্থান নেই। এতে মানুষের মধ্যে অযৌক্তিক ধ্যান-ধারণা অন্ধ বিশ্বাস বেড়েই যায়। আমরা বিশ্বাস করি, জ্যোতিষীদের ভণ্ডামির বিরুদ্ধে সরাসরি দৃঢ়ভাবে চ্যালেঞ্জ জানানো সময় এসেছে।”

 মজার কথা, বিজ্ঞানীরা যখন চ্যালেঞ্জ জানানোকে স্বাগত জানাচ্ছেন, একান্ত প্রয়োজনীয় সামাজিক কর্তব্য বলে মনে করছেন এবং তাঁদের আহ্বানের সঙ্গে সহমত হয়ে ভারতীয় বিজ্ঞান ও যুক্তিবাদী সমিতি সরাসরি চ্যালেঞ্জ জানিয়ে প্রথম সারির নামী-দামী বহু সংখ্যক জ্যোতিষীদের পরাজিত, পর্যুদস্ত করেই চলেছে তখন পরাজিত পর্যুদস্ত জ্যোতিষীসহ অনেক জ্যোতিষীই বিজ্ঞান-সম্মত উপায়ে ভাগ্য গণনার বিজ্ঞাপন দিয়ে চলেছে। ফলিত জ্যোতিষের মতো অ-বিজ্ঞানকে হাতিয়ার করে জেনে বুঝে লোক ঠকিয়ে চলেছে।