পাতা:অলৌকিক নয় লৌকিক (প্রথম খণ্ড) - প্রবীর ঘোষ.pdf/৪৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।
কুসংস্কারের বিরুদ্ধে বিজ্ঞান
৫১

শাসনের দিন ফুরিয়েছে। মোল্লারা ফরাসি সরকারের বিরুদ্ধে জনতাকে নানাভাবে উসকানি দিতে লাগল।

 মোল্লাদের কথা আলজিরীয়দের কাছে স্বয়ং আল্লার কথা। অতএব, তারা আর ফরাসি সরকারকে পাত্তা দিতে রাজি হল না। আলজিরিয়ার ফরাসি সরকার প্রমাদ গুনলেন। মোল্লাদের এইসব কথার পিছনে যে কোনও যুক্তি নেই, তা অধিবাসীদের বোঝাতে গিয়ে ব্যর্থ হয়ে তাঁরা শঙ্কিত হলেন। এই বিপদের কথা জানিয়ে ফ্রান্সে খবর পাঠালেন। ফ্রান্সের ফরাসি সরকার দীর্ঘ আলোচনার পর এই সিদ্ধান্তে পৌঁছোলেন যে, সেনা পাঠিয়ে সাময়িকভাবে দমননীতি চালানো গেলেও এটা কোনো স্থায়ী সমাধান নয়। স্থায়ী সমাধানের জন্য প্রয়োজন, চতুর মোল্লাদের প্রভাব নষ্ট করা। জনসাধারণকে বুঝিয়ে দিতে হবে মোল্লাদের কোনও অলৌকিক ক্ষমতা নেই। ওরা এতদিন শুধু মিথ্যের আশ্রয় নিয়ে লোক ঠকিয়ে এসেছে।

 ফরাসি সরকার এই কাজের ভার দিলেন ফ্রান্সের সেরা জাদুকর রবেয়ার উদ্যাঁকে। এতদিন শুধু চিত্ত বিনোদনের জন্যই উদ্যাঁ তাঁর জাদুর খেলা দেখিয়েছেন। এবার দেশের জন্য অলৌকিক ক্ষমতাসম্পন্ন আলজিরীয় মোল্লাদের মুখোমুখি হলেন। দলবল নিয়ে আলজিরিয়ার রাজধানী আলজিয়ার্স শহরে হাজির হলেন। সেখানকার সেরা থিয়েটার হলে তাঁর জাদু প্রদর্শনের ব্যবস্থা হল। বিশেষভাবে আমন্ত্রিত হলেন শহরের বহু গণ্যমান্য আরব মুসলমান ও মোল্লারা। ফরাসি জাদু দেখার ব্যাপারে অবশ্য জনসাধারণের খুব একটা উৎসাহ ছিল না। ওরা বিশ্বাস করত মোল্লাদের নানা ধরনের অলৌকিক কাণ্ডকারখানার কাছে ফরাসি জাদুকরের জাদু নেহাতই ছেলেখেলা।

 কিছু খেলা দেখানোর পর উদ্যাঁ light and heavy chest (হালকা ও ভারি বাক্স) খেলাটি দেখালেন। একটি ফরাসি সুন্দরী একটা ছোট্ট হালকা লোহার বাক্স লোহার পাটাতন পাতা মঞ্চে এনে রাখল। উদ্যাঁ এবার মঞ্চে আহ্বান জানালেন উপস্থিত সেরা শক্তিমান দর্শককে। শহরের সেরা পালোয়ান বিশেষ আমন্ত্রিত হিসেবে উপস্থিত ছিলেন। অতএব তিনি উঠলেন মঞ্চে।

 উদ্যাঁ বললেন, “দেখো তো বাক্সটা তুলতে পারো কি না?”

 পালোয়ান অতি তাচ্ছিল্যে তাঁর বাঁ হাত দিয়ে তুলে আবার নামিয়ে রাখলেন।

 উদ্যাঁ এবার পালোয়ানটিকে বললেন, “আমি আমার জাদুর বলে তোমার সব শক্তি কেড়ে নিচ্ছি।”

 উদ্যাঁ কথা বলার সঙ্গে সঙ্গে সম্মোহন করার বিশেষ ভঙ্গিতে দু’হাত নাড়তে লাগলেন। তারপর একসময় বললেন, “এবার তোমার কোনও শক্তি নেই। তুমি বাক্সটা আর তুলতে পারবে না।”

 পালোয়ান তাচ্ছিল্যভরে হাত দিলেন বাক্সের হাতলে, কিন্তু এ কী! উঠছে না তো! তাচ্ছিল্যের হাসি মুহূর্তে মিলিয়ে গেল। সমস্ত শক্তি দিয়ে হেঁচকা দিলেন,