কিন্তু বাক্সটা এক ইঞ্চিও উঠল না।
দর্শকদের চোখে বিস্ময় ও আতঙ্ক। এমন দৈত্যের মত লােককে শিশুর চেয়েও দুর্বল করে দিয়েছেন জাদুকর।
উদ্যাঁ এবার অলৌকিক শক্তি অধিকারী মােল্লা দর্শকদের আহ্বান জানালেন পালােয়ানটিকে শক্তি ফিরিয়ে দিতে।
দর্শকদের একান্ত অনুরােধে স্টেজে উঠে এলেন শহরের দুই সেরা মােল্লা পীর। অনেক ঝাড়ফুঁক করলেন, কিন্তু তবুও পালােয়ানটি ঐ ছােট্ট লােহার বাক্সটা তােলার শক্তি ফিরে পেলেন না।
শেষ পর্যন্ত উদ্যাঁই তাকে শক্তি ফিরিয়ে দিলেন। দর্শকরা অবাক বিস্ময়ে দেখল, এবার পালােয়ান অবহেলায় বাঁ হাতেই বাক্সটা তুলে ফেললেন। কৃতজ্ঞতায় উদ্যাঁর পায়ে মাথা ঠেকালেন পালােয়ান।
এর পর একের পর এক শহর ঘুরে উদ্যাঁ তাঁর আশ্চর্য খেলা দেখিয়ে মােল্লাদের প্রভাবের ভিত কাঁপিয়ে দিলেন। তারপর শুরু করলেন আর এক নতুন খেলা। আলজিরীয়দের বােঝালেন, এতদিন ধরে তাঁর খেলাগুলাে সকলে অলৌকিক বলে মনে করছেন, তার কোনওটাই অলৌকিক নয়। সবই লৌকিক কৌশলের সাহায্যে দেখান হয়েছে। উদ্যাঁ এবার মােল্লাদের দেখানাে নানা ভােজবাজির খেলা দেখিয়ে সেগুলাে যে নেহাতই লৌকিক কৌশলে দেখানাে হয় তা বুঝিয়ে দিলেন।
পালােয়ানের শক্তিহরণের খেলায় উদ্যাঁ বৈদ্যুতিক চুম্বকের সাহায্য নিয়েছিলেন। মঞ্চের আড়ালে উদ্যাঁর সহকারী ইশারা পেলেই বিদ্যুৎ-তরঙ্গ চালু করে দিতেন। বাক্সের তলার লােহা, মঞ্চের উপরের লােহার পাটাতনের সঙ্গে বৈদ্যুতিক চুম্বকের আকর্ষণে আটকে থাকত। সেই লােহার মঞ্চের উপরই দাঁড়িয়ে বাক্সকে তোলা পৃথিবীর কোনও মানুষের পক্ষেই সম্ভব নয়। কারণ, তখন বাক্স তুলতে হলে তাকে চুম্বকের আকর্ষণের চেয়েও বেশি শক্তি প্রয়ােগ করতে হবে।
মােল্লাতন্ত্রের ও কুসংস্কারের হাত থেকে মুক্তি পেয়ে আলজিরীয়রা উদ্যাঁকে যে কতখানি ভালােবেসেছিলেন তা উদ্যাঁকে তাঁদের অভিনন্দনপত্রের প্রতিটি লাইনে ছড়িয়ে রয়েছে।
আলজিরিয়ায় উদ্যাঁর প্রয়ােজন শেষ হলেও পৃথিবীর বহু দেশেই এমনকী আমাদের ভারতেও উদ্যাঁর প্রয়ােজন শেষ হয়ে যায়নি। কারণ—
আমরা অনেকেই প্রয়ােজনমতাে যুক্তিকে এড়িয়ে চলতে ভালােবাসি।
ভালােবাসি কিছু কিছু কুসংস্কারের কাছে মাথা নােয়াতে। চমক
লাগানাে গল্প বলতে ভালবাসি। পরের মুখে শােনা ঘটনাকে
নিজের চোখে দেখা সত্য-ঘটনা বলে জাহির করার তীব্র
লােভের শিকার হই। এই তীব্র লােভ থেকেই