পাতা:অলৌকিক নয় লৌকিক (প্রথম খণ্ড) - প্রবীর ঘোষ.pdf/৫৪

উইকিসংকলন থেকে
পরিভ্রমণে চলুন অনুসন্ধানে চলুন
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
সাধুসন্তদের অলৌকিক ক্ষমতা
৫৭

ওরা শুনতে পাবে?

 সন্ধের আগেই হাজার-হাজার শিষ্য-শিষ্যা ও ভক্তেরা বারবার ভদ্রলােক ও তার দুই ছেলেকে কৌতূহলের চোখে দেখে গেল।

 শেষ পর্যন্ত সেই শুভ মুহূর্তটি এল। গুরুদেবের চরণে প্রণাম জানিয়ে ভদ্রলােক তাঁর দুই ছেলেকে দীক্ষা দিতে অনুরােধ করলেন। গুরুদেব ছেলেদুটিকে একে একে কাছে টেনে নিয়ে জপ-মন্ত্র দিয়ে বললেন, শুনতে পেয়েছিস তাে?

 হাজার হাজার ভক্ত উদগ্রীব হয়ে অপেক্ষা করতে লাগলেন এরপর কী হয় দেখার জন্য। ছেলে দুটি পরিষ্কার গলায় বলে উঠল, শুনতে পেয়েছি।

 ঘটনার আকস্মিকতায় ভক্তেরা হৃদয়াবেগ সংযত করতে পারলেন না। অনেকেরই দু’চোখ বেয়ে নেমে এলাে জলের ধারা। স্কুলের হল-ঘর গুরুদেবের জয়ধ্বনিতে ভরে গেল। ভদ্রলােক লুটিয়ে পড়লেন গুরুদেবের পায়ে।”


 গােরার কাছে এই ঘটনা শােনার পর একদিন ওর সঙ্গে গেলাম গুরুদেব-বালক ব্রহ্মচারীর দর্শনে। কলকাতার এক অভিজাত এলাকায় তখন তিনি থাকতেন। একতলার একটা হলের মতাে বিরাট ঘরে প্রচুর ভক্ত অপেক্ষা করছিলেন। আমি আর গােরাও ওই ঘরেই বসলাম। শুনলাম, গুরুদেব দোতলায় দর্শন দেন। সময় হলে আমাদের সকলকেই ডাকা হবে। ওখানে অল্প সময়ের মধ্যেই অনেকের সঙ্গে আলাপ করে ফেললাম। এঁদের মধ্যে একজন ছিলেন ভারত-বিখাত শিক্ষাবেত্তা। তাঁকে জিজ্ঞেস করলাম, “আপনি ওঁর কোনও অলৌকিক ক্ষমতা নিজে দেখেছেন?”

 উত্তরে উনি যা বললেন, তা খুবই বিস্ময়কর। উনি একবার গুরুদেবের কাছে খিদে পেয়েছে বলাতে গুরুদেব বললেন, “দাঁড়া, তাের খাবার আনার ব্যবস্থা করছি।” গুরুদেব ধীরে ধীরে মিলিয়ে গেলেন, একটা আলাে হয়ে গেলেন। তারপর আলাের ভেতর থেকে ভেসে এলাে সােনার থালায় সাজানাে নানা রকমের মিষ্টি। কী তার স্বাদ! কী তার গন্ধ! অপূর্ব! জিজ্ঞেস করেছিলাম, “এ ঘটনার সময় আপনার সঙ্গে আর কেউ উপস্থিত ছিলেন?”

 “না, শুধু আমিই ছিলাম।”

 একসময়ে আমাদের ডাক পড়ল। সকলের সঙ্গে ওপরে গেলাম। তলার ঘরটার মতােই একটা বড় ঘরে সিল্কের গেরুয়া পরে একটা বাঘছালের উপর বসে আছেন গুরুদেব। চারিদিকে পেলমেট থেকে দীর্ঘ ভারী পরদা ঝুলছে। ঘরে মৃদু আলাে। দেখলাম ভক্তেরা এক এক করে তাঁর কাছে গিয়ে প্রণাম করে নিচে চলে যাচ্ছেন। কেউ দিচ্ছেন ফুলের শ্রদ্ধাঞ্জলি। কেউ এগিয়ে দিচ্ছেন মিষ্টির প্যাকেট। কেউ কেউ শিশি বা বােতলে জল নিয়ে এসেছেন। ওই জলে গুরুদেবের পায়ের বুড়াে আঙুল ডুবিয়ে পবিত্র পাদোদক করে নিচ্ছেন।