পাতা:অলৌকিক নয় লৌকিক (প্রথম খণ্ড) - প্রবীর ঘোষ.pdf/৫৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।
৫৮
অলৌকিক নয় লৌকিক (প্রথম খণ্ড)

 ব্রহ্মচারীবাবার এক সেবক যিনি সমস্ত ব্যাপারটা তদারক করছিলেন। তিনি একসময় আমাকে এগিয়ে গিয়ে প্রণাম করতে বললেন। আমি এগিয়ে গিয়ে প্রণাম জানিয়ে ব্রহ্মচারীবাবাকে বললাম, “শ্রদ্ধার থেকেই প্রণাম আসে। আমার একটা প্রশ্নের সঠিক উত্তর পেলে আপনার অলৌকিক ক্ষমতা স্বীকার করে নিয়ে শ্রদ্ধার সঙ্গেই প্রণাম করব।” ব্রহ্মচারীবাবা ইশারায় ঘরের কোনায় দাঁড়াতে বললেন। দাঁড়ালাম। শিষ্যদের প্রণাম শেষ হতে ব্রহ্মচারী আমার দিকে তাকালেন। আমার পাশে ছিল গোরা ও সেবক ভদ্রলোক। বালক ব্রহ্মচারী আমাকে কাছে ডেকে বললেন, “তোর প্রশ্নটা কী?” মুখে একটা রহস্যের হাসি।

 বললাম, “আমি গতকাল সন্ধে সাতটার সময় কোথায় ছিলাম?”

 ব্রহ্মচারী এবার গোরাকে বললেন, “ও বুঝি তোর বন্ধু? তা, তুই নিচে গিয়ে বোস। আমি ওর সঙ্গে একটু কথা বলব।”

 গোরা বেরিয়ে যেতেই সেবকটিকে বললেন, “তুই দরজাটা ভেজিয়ে দিয়ে যা। কেউ যেন আমার কাছে এখন না আসে।”

 সেবকটি চলে যেতে ব্রহ্মচারীবাবা আমার সঙ্গে নানা রকম গল্পসল্প করলেন। আমার বাড়ির খবরাখবর নিলেন। এরই মধ্যে এক সময় সেবকটি দরজা খুলে জানাল, “দুই ভদ্রলোক এক ভদ্রমহিলাকে নিয়ে এসেছেন। মহিলাটির গল-ব্লাডারে স্টোন হয়েছে। আজই নার্সিংহোমে অপারেশন করার কথা। আপনার আশীর্বাদ নিতে এসেছেন।”

 ব্রহ্মচারী বললেন, “অপেক্ষা করতে বল, দেরি হবে।”

 আমরা আবার আমাদের গল্পে ফিরে গেলাম। সময় কাটতে লাগল, এক সময় আবার সেবকটি ঘরে ঢুকে বলল, “গুরুদেব পেশেণ্ট যন্ত্রণায় ছটফট করছে। যদি অনুমতি করেন তো—”

 বিরক্ত গুরুদেব বললেন, “যা নিয়ে আয়।”

 একটু পরেই দুই ভদ্রলোকের সাহায্যে সেবকটি এক মহিলাকে নিয়ে ঘরে ঢুকলেন। মহিলাটির মুখের চেহারায় তীব্র যন্ত্রণার চাপ। মহিলাটিকে সাষ্টাঙ্গে প্রণামের ভঙ্গিতে গুরুদেবের পায়ের কাছে শুইয়ে দেওয়া হলো। গুরুদেব সঙ্গে লোকদুটিকে বললেন, “তোরা নীচে গিয়ে বোস।” সেবকটিকে বললেন, “যা কুশিতে করে একটু জল নিয়ে আয়।”

 সেবক কুশিতে জল নিয়ে এলেন। তারপর তিনিও গুরুদেবের আদেশে বেরিয়ে গেলেন।

 ব্রহ্মচারী কুশিটি মহিলাটির পিঠের উপর বসিয়ে তিরিশ সেকেণ্ডের মতো বিড়বিড় করে কী যেন মন্ত্র পড়লেন ও কুশির জলে বারকয়েক ফুল ছিঁড়ে পাপড়ি ছুঁড়লেন। তারপর আমাকে বললেন, “দেখ তো, জলটা গরম হয়েছে কি না?”

 কুশির জলে হাত দিলাম, গরম। বললাম, “গরম হয়েছে।”