১৯৮৬-র কলিকাতা পুস্তক মেলায় বইটি প্রকাশিত হওয়ার পর থেকে আজ পর্যন্ত আমাদের সমিতি, বহু সহযোগী সংস্থা, বিভিন্ন বিজ্ঞান ক্লাব ও যুক্তিবাদী সংগঠন অন্তত কয়েক হাজার অলৌকিক বিরোধী প্রদর্শনীতে আমার বর্ণিত পদ্ধতি অনুসরণ করে চাদরে ঢেকে শূন্যে ভাসার ঘটনাটি দেখিয়ে স্ব-ঘোষিত তিন যুক্তিবাদী সম্পাদকের মন্তব্যের অসারতা এবং যুক্তিহীনতাকে প্রমাণ করে দিয়েছে।
স্ব-ঘোষিত জ্যোতিষ সম্রাটদের মতো করে ‘যুক্তিবাদী’ ‘বিজ্ঞানমনস্ক’ ইত্যাদি কথাগুলো নিজের নামের সঙ্গে জুড়ে দিয়ে প্রচারের মাধ্যমে কিছু মানুষকে ভুল বুঝিয়ে তাদের কাছে যুক্তিবাদী সাজা যেতে পারে, কিন্তু সত্যিকারের যুক্তিবাদী হওয়া যায় না। কারণ—
যুক্তিবাদী সাজা যায় না। শুধুমাত্র জীবনচর্যার মধ্য দিয়েই
যুক্তিবাদী হতে হয়। যুক্তিবাদী আন্দোলনে নেতৃত্ব
দিতে হলে নিজেকে যুক্তিবাদী হতে হবে।
এর কোনও ব্যতিক্রম সম্ভব নয়।
যুক্তিকে বাদ দেওয়া যুক্তিবাদী মানুষগুলো যখন যুক্তিবাদী আন্দোলনের নেতা সাজে, তখন শঙ্কিত হই। শঙ্কার কারণ, এঁদের যুক্তিহীন চিন্তাধারা, চিন্তার অস্বচ্ছতা, ঈর্ষাকাতরতা, মানুষদের মধ্যে বিভ্রান্তি সৃষ্টিতে প্রবলতর ভূমিকা নেবে।
মন্ত্রে যজ্ঞের আগুন জ্বলে
এবার যে ঘটনাটা বলছি, সেটা ঘটেছিল আমার স্কুল জীবনে। সালটা সম্ভবত ১৯৫৭। বাবা রেলওয়েতে চাকরি করতেন, সেই সুবাদে আমরা তখন খড়্গপুরের বাসিন্দা। পড়ি কৃষ্ণলাল শিক্ষানিকেতনে। একদিন হঠাৎ খবর পেলাম, পাঁচবেডিয়া অঞ্চলের এক বাড়িতে খুব ভূতের উপদ্রব হচ্ছে। তার দিনকয়েক পরেই খবর পেলাম, বাড়ির মালিক ভূত তাড়াতে কোথা থেকে যেন এক বিখ্যাত তান্ত্রিককে নিয়ে এসেছেন। তারপরেই যে খবরটা পেলাম, সেটা ভূতের চেয়েও অদ্ভুত। তান্ত্রিক প্রতিদিনই যজ্ঞ করছেন এবং যজ্ঞের আগুন জ্বালছেন মন্ত্র দিয়ে, দেশলাই দিয়ে নয়।
এমন এক অসাধারণ ঘটনা নিজের চোখে দেখতে পরদিনই স্কুল ছুটির পর দৌড়লাম। গিয়ে দেখি শয়ে শয়ে লোকের প্রচণ্ড ভিড়। ভিড় ঠেলে যখন ভিতরে ঢোকার সুযোগ পেলাম, তখন দেখি যজ্ঞ চলছে। যজ্ঞের তান্ত্রিককে সেদিন অবাক চোখে দেখেছিলাম। তাকে কেমন দেখতে ছিল তা মনে নেই। তবে, এইটুকু মনে আছে, সেদিন তান্ত্রিক ছিল আমার চোখে ‘হিরো’।
পরের দিন পেটের ব্যথা বা ওই জাতীয় একটা কোনো অজুহাতে স্কুলে গেলাম না। দুপুরে মা’কে অনেক বুঝিয়ে-সুঝিয়ে যাওয়ার অনুমতি পেলাম। সেদিন যজ্ঞ