সাঁইবাবাকে লেখা পরের চিঠিগুলাের বয়ান একই ছিল। কোনও চিঠিরই উত্তর পাইনি।
শূন্যে হাত নেড়ে ছাই বের করাটা ঠিকমতাে পরিবেশে তেমনভাবে দেখাতে পারলে অলৌকিক বলে মনে হতে পারে।
১৬.৪.৭৮ তারিখের ‘সানডে’ সাপ্তাহিকে জাদুকর পি. সি. সরকার জুনিয়র জানান তিনি সাঁইবাবার সামনে শূন্যে হাত ঘুরিয়ে একটা রসগােল্লা নিয়ে আসেন। সাঁইবাবা এই ধরনের ঘটনার জন্য প্রস্তুত ছিলেন না, তিনি ভয় পেয়ে চিৎকার করে ওঠেন।
এর কতটা সত্যি, বা একটুও সত্যি আছে কী না—সন্দেহ আছে। কারণ, সাঁইবাবার আশ্রমের যা পরিকাঠামাে দেখেছি, তাতে এভাবে সাঁইবাবাকে তাঁরই আশ্রমে বে-আব্রু করা একেবারেই অসম্ভব।
শূন্যে হাত ঘুরিয়ে রসগােল্লা নিয়ে আসা, এটা জাদুর ভাষায় ‘পামিং’। পামিং হল কিছু কৌশল, যেগুলাের সাহায্যে ছােটখাটো কোনও জিনিসকে হাতের মধ্যে লুকিয়ে রাখা হয়। আমার ধারণা সাঁইবাবা তাঁর ‘পবিত্র ছাই’ পাম করে লুকিয়ে রাখেন না, কারণ প্রচুর ছাই ‘পাম’ করে লুকিয়ে রাখা সম্ভব নয়। সাঁইবাবা যে পদ্ধতিতে ভক্তদের ‘পবিত্র ছাই’ বিতরণ করেন বলে আমার ধারণা আমি সেই একই পদ্ধতিতে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্নজনের সামনে ছাই সৃষ্টি করেছি। প্রতিটি অত্যাশ্চর্য জাদুর মতােই এই খেলাটির কৌশল অতি সাধারণ।
যে অবতার শূন্যে ডান হাত নেড়ে পবিত্র ছাই বের করতে চান তার ডাঁন বগলে বাঁধা থাকে রবারের বা নরম প্লাসস্টিক জাতীয় জিনিসের ছােটখাটো ব্লাডার। ব্লাডার ভর্তি করা থাকে সুগন্ধি ছাই। ব্লাডারের মুখ থেকে একটা সরু-নল হাত বেয়ে সােজা নেমে আসে হাতের কব্জির কাছ বরাবর। পােশাকের তলায় ঢাকা পড়ে যায় ব্লাডার ও-নল। এবার ছাই সৃষ্টি করার সময় ডান হাত দিয়ে বগলের তলায় বাঁধা ব্লাডারটায় প্রয়ােজনীয় চাপ দিলেই নল বেয়ে হাতের মুঠোয় চলে আসবে পবিত্র ছাই। বাঁ হাত দিয়েও ছাই বের করতে চান? বাঁ বগলেও একটা ছাই-ভর্তি ব্লাডার বুলিয়ে নিন। দেখলেন তাে, অবতার হওয়া কত সােজা!
বােঝবার সুবিধের জন্য ছবি দেখুন।
এই পদ্ধতি ছাড়াও বিভূতি সৃষ্টি সম্ভব। ছাইয়ের পাউডারে ভাতের পড় মিশিয়ে লাড্ডু বানিয়ে আলখাল্লার ভিতরের দিকে ‘জাদু চিমটে’র সাহায্যে ঝুলিয়ে রাখা যেতে পারে। জাদুর পরিভাষায় একে বলে ‘লেড’ নেওয়া। তারপর আলখাল্লার তলায় হাত ঢুকিয়ে হাতে লাড্ডু এনে গুঁড়াে করে বিলি করলেই হলাে। লাড্ডুতে সেণ্ট মেশালে ‘সােনায় সােহাগা’।