পাতা:অশনি সংকেত - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৬৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

অশনি-সংকেত --বেশ, যোগান তবে । দেখি বসে বসে। --নাও, হাত-পা ধয়ে-এখন নন-চা খাবে একটু ? ? দাগী পন্ডিত বেশ শেকড় গেড়ে বসে গেল সেদিন থেকে, মনে হোল গঙ্গাচরণের। মনে মনে বিরস্তু হলেও গঙ্গাচরণ মাখে। কিছ বলতে পারে না । দেখতে দেখতে তিন দিন দিব্যি কাটিয়ে দিলে । অনঙ্গ-বেয়ের আশ্রিত জীব, কোথা থেকে এনে যে ওকে অনঙ্গ-বে। খাওয়ায়, কেউ বলতে পারে না । সেদিন দােগা পণ্ডিতকে বসে সামনের বেড়া বাঁধতে দেখে গঙ্গাচরণ বিরক্ত হয়ে বললেও কাজ করতে আপনাকে কে বলেচে ? দােগা পণ্ডিত থতিমত খেয়ে বললে-বসে বসে থাকি, বেড়াটা বাঁধ ভাবলাম । --না, ও রােখন। ও আপনাকে করতে হবে না । হাব বাঁধবে এখন। -ও ছেলেমানষে, ও কি পারবে ? -খব ভাল পারে। আপনার হাতে এখনি দায়ের কোপ লেগে যাবে। এখন ও রােখন । দািগ পড়িত একটু কুণ্ঠিত হয়েই থাকে। সংসারের এটা-ওটা করবার চেষ্টা করে, তাতে গঙ্গাচরণ আরও চােট যায়। এর মতলবখানা কি, তাহলে এখানেই থেকে যেতে চায় নাকি ? অনঙ্গ-বেী দিব্যি ওকে চা খাওয়াচ্চে, খাবার যে না খাওয়াচ্চে এমন নয়। সত্নীকে কিছ বলতেও সাহস করে না গঙ্গাচরণ । \, চালের অবস্থা ভীষণ । এর ওর মাখে শািন্ধ, শোনা যাচ্চে চাল কোথাও নেই। একদিন সাধ, ক্যপালী সন্ধান দিলে, কুলেখালিতে এক গোয়ালার বাড়ীতে কিছু চাল বিক্রি আছে। কথাটা গঙ্গাচরণের বিশ্ববাস হােল না। তবও গরজ বড় বালাই, সাধ, কােপালী ও সে দরজনে সাত ক্রোশ হোটে কুলেখালি গ্রামে উপস্থিত হোল। এদিকে রোল-টেল নেই, বড় বাজার গঞ্জ নেই-চাল থাকতেও পারে বিশ্ববাস হোল গঙ্গাচরণের ! খাঁজে খাঁজে সেই গোয়ালা-বাড়ী বারও হােল। ব্রাহ্মণ দেখে গহস্বামী ওকে যত্ন করে বসােল, তামাক সেজে নিয়ে এল । গঙ্গাচরণ বললে-জায়গাটা তোমাদের বেশ । আসল কথা কিছু বলতে সাহস করচে না, বািক ঢিপ ঢিপ করচে । কি বলে বসে কি জানি ! চাল না পেলে উপোস শহর হবে, সবসদ্ধি । গহস্বামী বললে-আজ্ঞে হ্যাঁ । তবে ম্যালেরিয়া খব। -সে সম্ভবত্র । --আপনাদের ওখানেও আছে ? নতুন গাঁয়ে বাড়ী আপনার ? সে তো নদীর ধারে । --তা আছে বটে, তব ম্যালেরিয়াও আছে। -এদিকে যাচ্ছিলেন কোথায় ? --তোমার এখানেই অ্যাস । -আমার এখানেই ? সে আমার ভাগ্যি। ব্রাহ্মণের পায়ের ধলো পড়লো। তা কি মনে করে ? --ভয়ে বলবো না নিভয়ে বলবো ? -সে কি কথা বাবােঠাকুর। আমাদের কাছে ও কথা বলতে নেই। বলন কি জন্যে আসা ?