দীর ঘাটে তালগাছের গুঁড়ি দিয়ে ধাপ তৈরী করা হয়েছে। দুটি স্ত্রীলোক স্নানরতা । একটি স্ত্রীলোক অপেক্ষাকৃত অল্পবয়েসী। ত্রিশের সামান্য কিছু নিচে হয়তো হবে। অপরটি প্রৌঢ়া ৷
প্রৌঢ়া বললে—ও বামনে-দিদি, ওঠো-কুমীর এয়েচে নদীতে—
অপরা বধূটির উঠবার ইচ্ছে নেই জল থেকে এত তাড়াতাড়ি। সে কোনো জবাব না দিয়ে গলাজলে দাঁড়িয়ে রইল।
—বামুন-দিদিকে নিয়ে আর কক্ষনো যদি নাইতে আসি !
-রাগ কোরো না পুঁটির মা—সত্যি বলচি জলে নামলে আমার আর ইচ্ছে করে না যে উঠি-
-কেন বামুন-দিদি ?
– যে গাঁয়ে আগে ছিলাম সেখানে কি জলকষ্ট । সে যদি তুমি দেখতে ! একটা বিল টিল, তার জল যেতো শুকিয়ে। জষ্টি মাসে এক বালতি জলে নাওয়া, অথচ তার নাম ছিল পদ্মবিল-
বধূটি হি হি করে হেসে ঘাড় দলিয়ে বললে- পদ্মবিল ! দ্যাগো তো কি মজা পুঁটির মা ? চত্তির মাসে জল যায় শুকিয়ে। নাম পদ্মবিল-
এই সময় একটি কিশোরী জলের ঘাটে নামতে নামতে বললে— অনঙ্গ-দিদি, তোমার বাড়ীতে কলু তেল দিতে এসে দাঁড়িয়ে আছে—শীগগির যাও, আমায় বলছিল, আমি বললাম ঘাটে যাচ্চি–ডেকে দেবো এখন--
অনঙ্গ-বৌয়ের হাসি তখনও থামে নি। সে বললে-তোর বৌদিদির কাছে গল্প করছি পদ্মবিলের--জল থাকে না চত্তির মাসে—নাম পদ্মবিল-
মেয়েটি বললে--সে কোথায় অনঙ্গ-দি ?
—সেই যেখানে আগে ছিলাম—সেই গাঁয়ে-
--সে কোথায় ?
-ভাতছালা বলে গাঁ। অম্বিকপুরের কাছে--
—তোমার শ্বশুরবাড়ী বুঝি ?
-না। আমার শ্বশুরবাড়ী হরিহরপুর, নদে জেলা। সেখানে বড্ড চলা-চলতির কষ্ট
সেখান থেকে বেরুলাম তো এলাম ওই পদ্মবিলের গাঁয়ে-
—তারপর ?
— তারপর সেখান থেকে এখানে।
অনঙ্গ জল থেকে উঠে বাড়ী চলে গেল ।
গ্রামখানিতে এরাই একমাত্র ব্রাহ্মণ পরিবার, আর সবাই কাপালী ও গোয়ালা । নদীর এ-গ্রাম বেশি দিনের নয়। বসিরহাট অঞ্চলের চাষী, জমি নোনা লেগে নষ্ট হওয়াতে স্থান থেকে আজ বারো-তেরো বছর আগে কাপালীরা উঠে এসে নদীতীরের এই অনাবাদী ত জমি সস্তায় বন্দোবস্ত করে নিয়ে গ্রামখানা বসিয়েছিল। তাই এখনও এর নাম নতুন কেউ কেউ বলে চর পোলতার নতুন পাড়া ।