পাতা:অসাধারণ - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৩৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

V8 অসাধারণ হাজু সে কথা গায়ে না মাখিয়া বলিল-তা হবে না । সে আমি শুনচি নে কিছুতেই শুনবো না-বম্বন তাহার পর সে উঠিয়া জলচৌকি হইতে একটা চায়ের পেয়ালা তুলিষা আনিয়া সযত্নে সেটা আঁচল দিয়া মুছিয়া আমাকে দেখাইয়া বলিল-দেখুন, কিনিচি --আপনাকে চা করে খাওয়াবো। এতে-চা করতে শিখিচি । ড্রেসডেন চায়না নয়, অন্য কিছু নয়, সামান্য একটা পেয়ালা । হাজুর মনস্তুষ্টির জন্য বলিলাম-বেশ জিনিস, বাঃ ও উৎসাহ পাইয়া আমাকে ঘরের এ জিনিস ও জিনিস দেখাইতে আরম্ভ করিল। একখানা আয়না, একটা টুকনি ঘটি, একটা সুদৃশ্য কৌটা ইত্যাদি । এটা কেমন ? ওটা কেমন ? সে এসব কিনিয়াছে। তাহার খুশি ও আনন্দ দেখিয়া আতি তুচ্ছ জিনিসেরও প্রশংসা না করিয়া পারিলাম না। এতক্ষণ ভাবিতেছিলাম, ইহাকে এ পথে আসিবার জন্য তিরস্কার করি এবং কিছু সদুপদেশ দিয়া জ্যাঠামশায়ের কর্ত্তব্য সমাপ্ত করি। কিন্তু হাজুর খুশি দেখিয়া ওসব মুখে আসিল না। যে কখনো ভোগ করে নাই, তাতাকে ত্যাগ করে যে বলে, সে পরমহিতৈষী সাধু হইতে পারে ; কিন্তু সে জ্ঞানী নয়। কাল ও ছিল ভিখারিণী, আজি এ পথে আসিয়া ওর অন্নবস্ত্রের সমস্যা ঘুচিয়াছে, বাল যে পরের বাডি চাহিতে গিয়া প্রহার খাইয়াছিল, তাজ সে নিজের ঘবে বসিয়া গ্রামের লোককে চা খাওয়াইতেছে, নিজের পয়সায় কেনা পেয়ালা পিরিচে-বার বাবাও কোনোদিন শহরে বাস করে নাই বা পেয়ালায় চা পান করে নাই। ওর জীবনের এই পরম সাফল্য ওর চোখে । তাহাকে তুচ্ছ করিয়া, ছোট করিয়া নিনা করিবার ভাষা আমার জোগাইল না । সঙ্কল্প ঠিক রাখা গেল না । হাজু চা বরিয়া আনিল। আর একখানা কঁসাৰ মাজ রেকাবিতে স্থানীয় ভাল সন্দেশ ও পোপে কাটা। কত আগ্রহের সহিত সে আমার সামনে জলখাবারের রেকবি রাখিল ।