পাতা:আখ্যানমঞ্জরী (তৃতীয় ভাগ) - ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর.pdf/১০১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
অকৃত্রিম প্রণয়।
৯১

হইল। বোধ হইতে লাগিল, যেন তাহার প্রাণত্যাগ হইয়াছে। বোটে উঠাইবার সময় রজর্ অচেতন ছিল। সে, কিয়ৎক্ষণ পরে নয়নদ্বয় উন্মীলিত করিল, এবং এণ্টোনিয়কে মৃত্যুলক্ষণাক্রান্ত পতিত দেখিয়া, শোকে একান্ত বিকলচিত্ত হইল, হায়। কি সর্ব্বনাশ ঘটিল। বলিয়া, এণ্টোনিয়ের অচেতন কলেবর আলিঙ্গন করিয়া অশ্রুজলে ভাসাইয়া দিল, এবং নিতান্ত অধীর হইয়া, আকুলবচনে বলিতে লাগিল, বয়স্য, আমিই তোমার প্রাণবধ করিলাম। তুমি যে আমার দাসত্বমোচন ও প্রাণরক্ষার নিমিত্ত এত যত্ন ও এত আয়াস করিতেছিলে, আমা হইতে তাহার এই পুরস্কার পাইলে। আমি অতি নৃশংস ও নরাধম, নতুবা এখন পর্য্যন্ত জীবিত রহিয়াছি কেন। তোমার প্রাণবিয়োগ দেখিয়া কি আমায় প্রাণধারণ করিতে হয়। তোমায় হারাইয়া, আমি প্রাণধারণের কোনও ফল দেখিতেছি না।

 এইরূপ আক্ষেপ করিয়া, সে সহসা দণ্ডায়মান হইল, এবং যদি নাবিকেরা বলপূর্ব্বক নিবারণ না করিত, তাহা হইলে সমুদ্রে ঝাঁপ দিয়া নিঃসন্দেহ প্রাণত্যাগ করিত। নাবিকেরা নিবারণ করাতে, সে যৎপরোনাস্তি বিলাপ ও পরিতাপ করিয়া বলিতে লাগিল, কেন তোমরা আমায় নিবারণ করিতেছ। আমি এরূপ বন্ধুর বিরহে, কখনই প্রাণধারণ করিতে পারি না। আমার জন্যই উহার প্রাণনাশ ঘটিয়াছে। অনন্তর এণ্টোনিয়ের শরীরের উপর পতিত হইয়া সে বলিতে লাগিল, এণ্টোনিয়, আমি অবশ্যই তোমার অনুগামী হইব, কেহই আমায় নিবারণ