পাতা:আখ্যানমঞ্জরী (তৃতীয় ভাগ) - ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর.pdf/১০২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৯২
আখ্যানমঞ্জরী।

করিয়া রাখিতে পারিবে না। অহে নাবিকগণ, তোমাদিগকে ঈশ্বরের দোহাই, তোমরা আমায় আর নিবারণ করিও না। আমি কৃতাঞ্জলি হইয়া ভিক্ষা করিতেছি, আমায় প্রাণাধিক বন্ধুর অনুগামী হইতে দাও।

 সৌভাগ্যক্রমে কিয়ৎক্ষণ পরে এণ্টোনিয় এক দীর্ঘনিশ্বাস পরিত্যাগ করিল। তদ্দর্শনে রজর্, আহ্লাদে অধীর হইয়া উচ্চৈঃস্বরে বলিল, আমার বন্ধু জীবিত আছেন, আমার বন্ধু জীবিত আছেন, জগদীশ্বরের কৃপায় এখন উহাব প্রাণত্যাগ হয় নাই। নাবিকেরা তাহার চৈতন্যসম্পাদনের নিমিত্ত যথেষ্ট চেষ্টা করিতে লাগিল। কিয়ৎক্ষণ পরে নয়নদ্বয় উন্মীলিত করিয়া, এণ্টোনিয় স্বীয় প্রিয় বয়স্যের দিকে দৃষ্টিপাতপূর্ব্বক বলিল, রজর্, আমি তোমার প্রাণরক্ষা করিতে পারিয়াছি, এজন্য জগদীশ্বরকে ধন্যবাদ দাও। রজর্, এণ্টোনিয়ের চেতনা-সঞ্চার ও নয়নোন্মীলন দর্শনে এবং অমৃতায়মান বাক্য শ্রবণে, আহ্লাদসাগরে মগ্ন হইল। তদীয় নয়নযুগল হইতে প্রবল বেগে বাষ্পবারি বিগলিত হইতে লাগিল।

 কিয়ৎক্ষণ পরে, সেই বোট জাহাজের নিকটে উপস্থিত হইল। জাহাজস্থিত লোকেরা, নাবিকদিগের মুখে সবিশেষ সমস্ত শ্রবণ করিয়া, কারুণ্যরসে পরিপূর্ণ হইল, এবং তাহাদের প্রতি সাতিশয় স্নেহ ও দয়া প্রদর্শন করিতে লাগিল। ঐ জাহাজ মালাকাপ্রদেশে যাইতেছিল, তথায় উপস্থিত হইয়া, তাহাদের দুই বন্ধুকে সেই স্থানে অবতীর্ণ করিয়া দিল। তাহারা