পাতা:আখ্যানমঞ্জরী (তৃতীয় ভাগ) - ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর.pdf/১০৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৯৮
আখ্যানমঞ্জরী।

দুরাত্মা আমার যেরূপ বিদ্রোহাচরণে উদ্যত হইয়াছিল, তাহাতে আমি কখনও উহার উপর অক্রোধ হইতে পারি না। বোধহয়, উহার শোণিত দর্শন না করিলে আমার কোপশান্তি হইবে না। তখন খিলোনিস্ বলিলেন, তাত, আপনি ইহা স্থির সিদ্ধান্ত জানিবেন, আমি জীবিত থাকিয়া, কখনই উঁহার প্রাণদণ্ড দেখিতে পারিব না। যখন উঁহার প্রাণবধ অবধারিত জানিতে পারিব, তখন অগ্রে আমি আত্মঘাতিনী হইব। যাহা হউক, যখন উনি আপনার বিদ্রোহাচরণে প্রবৃত্ত হইয়াছিলেন, আমি উঁহাকে অতিশয় দুরাচার ও অধার্ম্মিক বোধ করিযাছিলাম। কিন্তু, এখন আমি উঁহারে আর সেরূপ বোধ করিতেছি না, কারণ, আমি স্পষ্ট দেখিতেছি, রাজ্যভোগ মনুষ্যের এত প্রার্থনীয় বিষয় যে, তাহার জন্য ধর্ম্মাধর্ম্মবোধ, উচিতানুচিতবিবেচনা ও হিতাহিতবিবেক থাকে না। আপনি যে রাজ্যভোগের নিমিত্ত তনয়াকে অনাথা ও চিরদুঃখিনী করিতে উদ্যত হইয়াছেন, উনিও সেই রাজ্যভোগের লোভসংবরণে অসমর্থ হইয়া, তাদৃশ অসদাচরণে দুষিত হইয়াছিলেন।

 এই বলিয়া, খিলোনিস্ কিয়ৎক্ষণ মৌনাবলম্বন করিয়া রহিলেন, অনন্তর বাষ্পাকুললোচনে কাতরবচনে সম্বোধন করিয়া, পিতাকে বলিতে লাগিলেন, তাত, আমি বিবেচনা করিয়া দেখিলাম, আমার মত হতভাগা ও পাপীয়সী ভূমণ্ডলে আর নাই। পিতা ও পতির নিকট যেরূপ অবমানিত হইলাম, তাহাতে আর আমার প্রাণধারণে কোনও ফল নাই। পিতা ও পতি উভয়েই