পাতা:আখ্যানমঞ্জরী (তৃতীয় ভাগ) - ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর.pdf/১১৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
পুরুষজাতির নৃশংসতা।
১০৩

পরস্পর নিরতিশয় প্রণয়ে কালযাপন করিতে লাগিল। ইয়ারিকো, প্রায় সমস্ত দিন তাহার নিকটে থাকিয়া, তদীয় আহারাদির সমবধান করিয়া দিত, এবং ঐরূপ অবস্থায়, সে যতদূর সুখে, স্বচ্ছন্দে ও নিরাপদে কালযাপন করিতে পারে, তদ্বিষয়ে যথাশক্তি যত্ন ও চেষ্টার ত্রুটি করিত না।

 এই ভাবে কতিপয় মাস অতিক্রান্ত হইলে, একদিন ইঙ্কল্ বলিল, দেখ, এ অবস্থায় কালযাপন করা অতিশয় কষ্টদায়ক, প্রাণভয়ে আমায় সদা সশঙ্ক থাকিতে হয়, আর তুমিও আমার নিমিত্ত নিয়ত ব্যাকুল ও শঙ্কাকুল থাক। যদি তোমার মত হয়, সুযোগক্রমে এখান হইতে প্রস্থান করি। যে স্থলে আমার স্বদেশীয়েরা আছেন, তথায় গেলে সকল কষ্ট ও সকল শঙ্কার নিবারণ হইয়া যায়। তুমি অসময়ে আশ্রয় দিয়া যেমন আমার প্রাণরক্ষা কবিয়াছ, এবং এতাবৎ কাল পর্য্যন্ত নির্বিঘ্নে ও সুখ-স্বচ্ছন্দে রাখিয়াছ, আমিও আপন আয়ত্ত স্থানে তোমায় তেমনই সুখে ও স্বচ্ছন্দে রাখিব। তুমি আমার প্রাণেশ্বরী, তোমায় পরিত্যাগ করিয়া যাইতে, আমার কোনও মতে ইচ্ছা নাই। আমি বিলক্ষণ সঙ্গতিপন্ন লোক, আমার সমভিব্যাহারে গেলে, তুমি যাবজ্জীবন নিরতিশয় সুখসম্ভোগে কালহরণ করিতে পারিবে। তুমি এ বিষয়ে অসম্মত হইও না। ইয়ারিকো এই প্রস্তাবে সম্মতি প্রদর্শন করিলে, ইঙ্কল্ বলিল, অতঃপর তুমি প্রতিদিন সমুদ্রের তীরে যাইবে, এবং য়ুরোপীয় অর্ণবপোত দেখিতে পাইলে আমায় সংবাদ দিবে।