পাতা:আখ্যানমঞ্জরী (তৃতীয় ভাগ) - ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর.pdf/১২০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১১০
আখ্যানমঞ্জরী।

দাস পথের ধারে মাটি কাটিতেছে। তাহার দুই চরণ লৌহশৃঙ্খলে বদ্ধ। তদীয় আকার প্রকার দেখিয়া, ভদ্রসন্তান বলিয়া স্পষ্ট প্রতীতি হইল। যেরূপ কষ্টসাধ্য কর্ম্মে নিযুক্ত আছে, সে কোনও ক্রমে তাহা করিতে পারিতেছে না, এক এক বার কর্ম্ম করিতেছে, এক এক বার বিরত হইয়া দীর্ঘনিশ্বাসত্যাগ ও অশ্রুবিসর্জ্জন করিতেছে।

 এই ব্যাপার দর্শনে, য়ুবর্টোর অন্তঃকরণে সাতিশয় দয়ার উদয় হইল। তিনি ইটালিক ভাষায় তাহার পরিচয জিজ্ঞাসা করিলেন। সে, স্বদেশীয় ভাষাশ্রবণে, স্বদেশীয়জ্ঞানে তাঁহার দিকে মুখ ফিরাইয়া দাঁড়াইল, এবং শোকাকুলবচনে আপন দুরবস্থার পরিচয় দিতে লাগিল। কিয়ৎক্ষণ কথোপকথনের পর সে বলিল, আমি জেনোয়ার প্রধান বিচারক এডর্ণোর পুত্র।

 এই কথা কর্ণগোচর হইবামাত্র, নির্বাসিত বণিক্ চকিত হইয়া উঠিলেন, তৎকালে ভাবগোপন করিয়া, তৎক্ষণাৎ তথা হইতে প্রস্থান করিলেন, যে ব্যক্তি এডর্ণোর পুত্রকে দাস করিয়া রাখিয়াছিলেন, তাঁহার অনুসন্ধান করিয়া তদীয় আলয়ে উপস্থিত হইলেন, এবং তাঁহার সহিত সাক্ষাৎ করিয়া জিজ্ঞাসিলেন, আপনি কি লইয়া এই খৃষ্টীয় যুবককে দাসত্বমুক্ত করিতে পারেন। তিনি বলিলেন, আমার এরূপ বোধ আছে, ঐ যুবক ধনবান লোকের সন্তান, এজন্য আমি পাঁচ সহস্র টাকার ন্যূনে উহাকে ছাডিয়া দিব না। য়ুবর্টো, অবিলম্বে ঐ টাকা দিয়া, সেই যুবকের দাসত্বমোচন করিলেন।